মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ৪০ নারীকে প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে আগামীর উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে “উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য ঔষধি উদ্ভিদের সমাজভিত্তিক আঞ্চলিক চক্রকেন্দ্র উন্নয়ন” শীর্ষক ৬ দিনব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ২০২৫ পর্যন্ত ডাস-বাংলাদেশ ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৪০ জন অদম্য নারী উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ড. এম এ হাকিম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রতন কুমার ঘোষ বলেন, “বিশ্ববাজারে ঔষধি গাছের চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া ঔষধি উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সঠিক প্রশিক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে নারীরা নিজের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারবেন। আমরা চাই প্রতিটি বাড়ীতে, প্রতিটি গ্রামে ঔষধি গাছের ক্ষুদ্র আঞ্চলিক চক্রকেন্দ্র গড়ে উঠুক।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিসিনাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রডাক্টস বিজনেস প্রমোশনাল অফিসার ফাতেমা বিনতে রহমান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন সরদার,আরও উপস্থিত ছিলেন, নিম অর্গানিক লিমিটেড শান্তীমিশনের স্বত্বাধিকারী মমতাজ হাকিম, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (র.) জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়ারেন্ট অফিসার (অবঃ) আবু তাহের মোল্লা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ হাকিম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিসিনাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, গ্রামীণ নারীদেরকে রপ্তানিযোগ্য ঔষধি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ শেখানো। সমাজভিত্তিক আঞ্চলিক চক্রকেন্দ্র গড়ে তোলার ধারণা প্রদান করা।স্থানীয়ভাবে হারবাল কাঁচামাল সরবরাহ বৃদ্ধি,স্বনির্ভরতা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করা, ওষুধি গাছ চাষের উপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। প্রশিক্ষণে জানানো হয় বাসক, নিম, কালমেঘ, অশ্বগন্ধা, তুলসী, এ্যালোভেরা, শতমূলীসহ বহু উদ্ভিদ রয়েছে যা দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে উচ্চ বাজারমূল্য বাইরের দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা আনয়ন করা।
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহার আন্তর্জাতিক বাজারে হারবাল ওষুধের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বিশেষজ্ঞদের নানাবিধ মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্ব হারবাল প্রডাক্ট বাজারজাতকরণ প্রতিবছর প্রায় ১০% হারে বাড়ছে। বাংলাদেশে সংগঠিতভাবে চাষ করা গেলে বছরে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। নারীদের জন্য ঘরে বসে আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। দেশে বেকারত্বের হার কমবে এবং কৃষি অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আসা স্থানীয় নারী অংশগ্রহণকারীরা জানান, এই প্রশিক্ষণ তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে তারা নিজেদের বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে ঔষধি গাছের আঞ্চলিক ক্লাস্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে এ উদ্যোগ গ্রামীণ নারীদের আয়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে শুধু কৃষি উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ঔষধি গাছ তথা হারবাল শিল্পকে আরও শক্তিশালী করবে এমনটাই আশা আয়োজকদের। প্রশিক্ষনটি সমাপ্ত হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর মূল্যায়ন ও সনদ বিতরণের মাধ্যমে