নিজস্ব প্রতিনিধি:
রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের পুরোনো কারসাজি আবারও শুরু হয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫ টাকা বেড়ে এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১৫ টাকা। একই সময় চাল, আলু, রসুনসহ আরও বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম প্রতিকেজিতে সর্বোচ্চ ৮.৫৭ শতাংশ বেশি।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছে ৯৫–১১৫ টাকায়, যা দুই দিন আগেও ছিল ৯০–১১০ টাকা। টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে ২.৫০ শতাংশ। যদিও দেশে চিনির কোনো সংকট নেই—বরং আমদানি শর্ত শিথিলতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কারণে গত মাসেও চিনি ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছিল।
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন জানান, রমজান ঘিরে চিরাচরিত সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমদানি বাড়লেও এবং বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে—যা স্পষ্ট কারসাজি। কঠোর পর্যবেক্ষণ ও তদারকির মাধ্যমে দায়ী ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় আমদানি–রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় চিনির দাম বাড়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ডলার সংকট, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বাজার আরও চড়া হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বর–ডিসেম্বরে চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল না থাকা এই বাজার আবারও রোজাকে সামনে রেখে উর্ধ্বগতির দিকে।
রমজানে চাহিদা বাড়বে এমন ছোলা, খেজুর, মটর ডালসহ কয়েকটি পণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলার হারও বেড়েছে ১১–২৯৪ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজানের পণ্য আমদানিতে কোনো সংকট হবে না; প্রয়োজনীয় এলসি ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে।
এদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে—
-
পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, যা তিন দিন আগেও ছিল ৩০ টাকা।
-
আমদানি করা রসুন ২২০ টাকা, আগে ছিল ২০০ টাকা।
-
ছোলা ১১৫ টাকা, আগে ১১০ টাকা।
-
বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা, আগে ১৯০ টাকা।
-
সরু মসুর ডাল ১৬০ টাকা, আগে ১৫০ টাকা।
-
দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, যা মাত্র দুই মাস আগে ছিল ৮০ টাকা।
-
গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা, বেড়েছে ৫০ টাকা।
-
ডিম প্রতি ডজন ১৩৫ টাকা, আগে ছিল ১২৫–১২৬ টাকা।
-
ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা কেজি।
চালের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা (আগে ৮০ টাকা), পাইজাম ৬৮ টাকা (আগে ৬২ টাকা), আর মোটা চাল ৬০ টাকা (আগে ৫৫ টাকা)। টিসিবি জানায়, গত বছরের তুলনায় সরু চালের দাম বেড়েছে ৪.৭৩%, মাঝারি চাল ৩.২৮%, আর মোটা চাল ৮.৫৭%।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে এবং রমজানকে লক্ষ্য করে বিশেষ তদারকি জোরদার করা হবে।