মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
“অর্থের বিনিময়ে যৌনতা বিক্রি করে চলে জীবন, যাদের নেই কোন আদর ভালোবাসা। পুরুষরা এখানে আসে টাকা দিয়ে শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে। অনেকের সাথে মেলামেশায় ঝুঁকির মুখে পতিত হতে হচ্ছে এখানকান যৌনকর্মী নারীদের।
নিঃশ্চিত মরণব্যাধী এইডস্ সংক্রমণে মারাত্বক ঝুঁকির মুখে রয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশর সর্বোবৃহৎ যৌনপল্লি দৌলতদিয়ার প্রায় আড়াই হাজার নারী যৌনকর্মী।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিগত পাঁচ বছরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ৬ জন এইডস নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে চারজন নারী যৌনকর্মী ও দু’জন পুরুষ। উক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন, এইডস রোগ সংক্রমণে প্রয়োজনীয় আচরণগত নানা রকম বিধি নিষেধ না মানলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির সব যৌনকর্মীসহ এদের কাছে আসা যাওয়া করা পুরুষরাও এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এসটিআই, এইচআইভি এবং এইডস প্রতিরোধে দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশ, যৌনপল্লিসহ আশপাশের এলাকায় নিয়মিত নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পাঁচ মাস ধরে এই প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এসটিআই, এইচআইভি এবং এইডস প্রতিরোধে এই দুই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত।
সেখানে বসবাস করেন বিভিন্ন বয়সী আনুমানিক প্রায় আড়াই হাজারের বেশি নারী যৌনকর্মী। দেশের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে বিনোদন নিতে হাজার হাজার পুরুষ আসে দৌলতদিয়ার এই যৌনপল্লীতে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন, যেসব কারণে এইডস সংক্রমিত হয়, তার সবই বিদ্যমান আছে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। আরো জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এইচআইভি, এইডস প্রতিরোধে কাজ করছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পায়াক্ট বাংলাদেশ। এ সংস্থার কাছ থেকে তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে ছয়জন দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ও আশপাশ এলাকার এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অনেকের মাঝেই এই রোগ থেকে থাকতে পারে। আর যেসব পুরুষ অর্থের বিনিময়ে শারীরিক চাহিদা মিটাতে আসে তারা অনেক সময় সতর্কতা অবলম্বন করেন না। পল্লীতে আসা পুরুষরা যদি মেলামেশাকালে সতর্কতা অবলম্বনে কনডম ব্যবহার করে তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা সম্ভব। অনেক যৌনকর্মীই তারা মেলামেশার সময় পুরুষ সাথিকে কনডম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বলেও অভোযোগ রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নারী পুরুষ উভয়েই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দৌলতদিয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী জানান, এইডসে আক্রান্তদের মধ্যে চার নারী যৌনকর্মী ও দু’জন পুরুষ। তিনি বলেন, এইচআইভি এইডস প্রতিরোধে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আমাদের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর থেকেই এখানে বন্ধ হয়ে গেছে এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যবস্থা। তিনি আরো বলেন, এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত পাঁচ বছরে এই যৌনপল্লীর তিন নারী যৌনকর্মী ও তাদের কাছে আসা দুই পুরুষের শরীরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এইডস পজিটিভ পেয়েছি আমরা। অন্য এক নারী যৌনকর্মীর দেহে এইডস পজিটিভ পেয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশ। পরে এইডসে আক্রান্ত ওই রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিজ নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশের দৌলতদিয়া শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক শেখ রাজীব জানান, প্রকল্প চলাকালে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষায় ৪০ বছর বয়সী এক নারী যৌনকর্মীর দেহে এইডস পজিটিভ ধরা পড়ে। ওই নারীকে আলাদা রেখে তাকে নিয়মিত ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শরীফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মরণব্যাধি এইডস্ থেকে রক্ষা পেতে হলে এখানে আসা সকল পুরুষদেরকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লির সকল যৌনকর্মীর কাছে আসা সকল পুরুষ এইডস আক্রান্ত হওয়ার মারাত্বক ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে তিনি জানান।