মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারী সদর উপজেলার নীলফামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি), প্রশংসাপত্র ও প্রত্যয়ন পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব কাগজপত্র পেতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অনিয়ম চলে আসছে। টাকা না দিলে প্রয়োজনীয় সনদপত্র পাওয়া যায় না—এমন অভিযোগও করেছেন তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোছা: নুসরাত জাহান লামিয়া (চতুর্থ শ্রেণি, রোল নং–৫৩) যথাযথ নিয়মে অনলাইনে আবেদন করে নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে টিসি প্রয়োজন হয়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে লামিয়ার পিতা মোঃ লিটন সরকার বিদ্যালয়ে টিসি নিতে গেলে প্রধান শিক্ষক দিপালী রানী রায় টিসি দেওয়ার বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
একই সময় বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী পূজা রানী রায়ের কাছ থেকেও টিসি প্রদানের জন্য ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এছাড়া ছাত্রী নুরে জান্নাত তানিশার অভিভাবকের কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে প্রধান শিক্ষক দিপালী রানী রায় ও অফিস সহায়ক জুয়েল রানা উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিক মোঃ লিটন সরকারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় অর্থ নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষক বলেন, “এই স্কুলের পেছনে আমার অনেক ব্যয় আছে, তাই নিজের ইচ্ছায় এই টাকা নিচ্ছি।”
বিদ্যালয়ে উপস্থিত একাধিক অভিভাবক জানান, টাকা না দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায় না। এক অভিভাবক বলেন, “আমরা অসহায়। বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে সনদ নিচ্ছি।”
ঘটনার পর সাংবাদিক লিটন সরকার নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একই সঙ্গে বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকেও লিখিতভাবে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন,
“প্রশংসাপত্র, টিসি বা প্রত্যয়ন পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অর্থ নেওয়ার বিধান নেই। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ নায়িরুজ্জামান বলেন,
“প্রশংসাপত্র কিংবা প্রত্যয়ন পত্র দিতে ঘুষ নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিভাবক ও সচেতন মহল দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।