নিজস্ব প্রতিনিধি:
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের আগের রাতেই হত্যাচেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ঢাকার সাভারের একটি রিসোর্টে অবস্থানকালে তিনি তার কথিত বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে জানান, পরদিন এমন একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে—যা ‘সারা দেশ কাঁপাবে’। পরদিনই রাজধানীর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্য দিবালোকে হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে পাওয়া এসব তথ্য নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে, মোহাম্মদপুরের এক সাবেক কাউন্সিলর এই হত্যাচেষ্টার মাস্টারমাইন্ড। অন্তত ২০ জনের একটি সংগঠিত গ্রুপ এই ঘটনায় জড়িত ছিল, যারা পরিকল্পনা, অর্থায়ন, অস্ত্র সরবরাহ, হামলার পর পালিয়ে যাওয়া এবং সীমান্ত পারাপারে সহায়তা করেছে।
র্যাব ও পুলিশের অভিযানে এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন এবং কয়েক কোটি টাকার চেক। গ্রেফতারদের রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে এবং আরও শুটার গ্রুপ মাঠে সক্রিয় থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ওসমান হাদিকে হত্যার লক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। শুটার ফয়সালের বাসা থেকে একাধিক চেক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোতে তার স্বাক্ষর রয়েছে। এসব চেক যাচাই-বাছাই চলছে।
র্যাব জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বোনের বাসার নিচ থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নরসিংদীর তরুয়া এলাকার একটি বিল থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসাম্মাৎ হাসি বেগমকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। পরে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, কথিত বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, মোটরসাইকেলের কথিত মালিক আবদুল হান্নান, সহযোগী কবির এবং সীমান্ত পাচারে জড়িত সন্দেহে আরও কয়েকজন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হামলার আগের রাতে ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের ২০৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। সেখানেই মারিয়া আক্তার লিমার কাছে ‘সারা দেশ কাঁপানো’ ঘটনার ইঙ্গিত দেন ফয়সাল। পরদিন সকালে তারা রিসোর্ট ছাড়েন এবং ঢাকায় এসে হামলা চালান।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, হামলার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ছিল ভুয়া। ঘটনার পর ফয়সাল আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় আশ্রয় নেন, যেখানে তার বাবা নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে আসলটি লাগান এবং পালাতে সহায়তা করেন। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে ফয়সালের কাছে অর্থ পাঠানোর তথ্যও মিলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা জড়িত এবং কার কী ভূমিকা ছিল—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।