১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাদি হত্যাচেষ্টার শুটার ফয়সাল এখন ভারতের মহারাষ্ট্রে, প্রযুক্তি দিয়ে অবস্থান নিশ্চিত গোয়েন্দাদের

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্রে অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বাংলাদেশি সিমকার্ড পরিবর্তন করে তিনি ভারতীয় রিলায়েন্স জিও কোম্পানির সিম ব্যবহার করছেন। তবে অধিকাংশ সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখছেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ফয়সাল নানা কৌশল অবলম্বন করেন। মোবাইল ফোনে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে কখনো নিজের অবস্থান দেখান সিঙ্গাপুরে, কখনো থাইল্যান্ডে, আবার কখনো পুরান ঢাকায়। তবে ফোনসেট পরিবর্তন না করায় আইএমই নম্বরের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানে তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হন গোয়েন্দারা।

তদন্তে জানা গেছে, বর্তমানে ফয়সালের সঙ্গে রয়েছে তার সহযোগী মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ। এদিকে হাদি হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা অর্থায়ন করেছে, সে বিষয়ে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে। ফয়সালের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বিশ্লেষণ করে অর্থদাতাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র চার হাতবদল হয়ে নরসিংদীর একটি লেকে ফেলা হয়। মঙ্গলবার সেখান থেকে র‍্যাব মোট তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে চারজন রিমান্ডে রয়েছে। এছাড়া ফয়সালের বাবা-মাকে জবানবন্দির পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে নুরুজ্জামান নামে আরেকজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন—ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, কথিত মোটরসাইকেল মালিক আব্দুল হান্নান, সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও, ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. কবির, ফয়সালের বাবা-মা এবং গাড়ি ভাড়া দেওয়া রেন্ট-এ-কারের মালিক নুরুজ্জামান।

তদন্তের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ফয়সালের ব্যাংক হিসাব। তার অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল, কত টাকা উত্তোলন হয়েছে এবং দেশ-বিদেশ থেকে কারা অর্থ পাঠিয়েছে—এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বিষয়টি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ফয়সালের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।

হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর ফয়সাল আগারগাঁওয়ে তার বোনের বাসায় অস্ত্র লুকিয়ে রাখে। পরে পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের মাধ্যমে অস্ত্র নরসিংদীতে নিয়ে গিয়ে একটি লেকে ফেলে দেওয়া হয়। র‍্যাব অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল।

তদন্তসূত্রে আরও জানা গেছে, ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যায়। স্থানীয় মানব পাচারকারী চক্রের সহায়তায় সীমান্তের কাঁটাতারের নিচে থাকা সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে তারা দেশ ছাড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top