১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সচিবালয়ে আন্দোলনের জেরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আইন ভেঙে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খলায় জড়িত অভিযোগে ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর ফলে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। চাকরি রক্ষার তাগিদে অনেকেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন—আন্দোলনে নামা তাদের ভুল ছিল। বৃহস্পতিবার সচিবালয় ঘুরে এমন ভীতিকর পরিবেশের চিত্র দেখা গেছে।

সরকার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, সচিবালয়ের এই কর্মসূচিকে আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। নীতিনির্ধারকদের মতে, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেছেন। অথচ সরকারি বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যা উপেক্ষা করেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এসব জানানো সত্ত্বেও যেভাবে কর্মচারীরা আইন ভেঙেছেন, তা চাকরিবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সচিবালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে স্ট্যান্ড রিলিজ করে অন্য জেলায় বদলি করা হয়। এই ঘটনাগুলো সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুরুতে আন্দোলনটি বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে হলেও সরকার পে-কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছিল। পরে ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে আন্দোলন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এখন আর কেউ আন্দোলনে যেতে আগ্রহী নন, সবাই ভয়ের মধ্যেই আছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয় একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান, এখানে মিছিল-মিটিং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুরুতে আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন থাকলেও এখন বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও শঙ্কিত বলে জানান।

এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সঙ্গে যুক্ত একাংশের সদস্যরাও আতঙ্কের মধ্যেই নিয়মিত অফিস করছেন। পুরো সচিবালয়জুড়ে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বদলি হওয়া সহকারী শিক্ষকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতেই হবে, এ ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা দেখানো হবে না। দাবি আদায়ে তদবির করেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নেতারা বদলির আদেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, সচিবালয় ভাতার দাবিতে আন্দোলনের সময় গত ১০ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে তার কার্যালয়ে টানা ছয় ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, তথ্য, মন্ত্রিপরিষদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন।

পরদিন কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা আইন ভাঙবেন তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের এই কঠোর অবস্থানের ফলে সচিবালয়ে আন্দোলন আপাতত স্তিমিত হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক আরও গভীর হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top