২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

ফটিকছড়িতে কে পাচ্ছেন ৮ দলীয় জোটের একক মনোনয়ন

এম. আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ৮ দলীয় ইসলামী ও সমমনা জোটের একক প্রার্থী কে হচ্ছেন—এ প্রশ্ন এখন এলাকার রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো এই আসনেও জল্পনা-কল্পনা, হিসাব-নিকাশ এবং রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন করে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

এবারের নির্বাচন মূলত দুই মেরুর লড়াইয়ে গড়াচ্ছে—এটি এখন অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এনসিপি, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি ছোট জোট ও দল মাঠে থাকলেও বাস্তবতা হলো বিএনপি ও জামায়াতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দুটি বৃহৎ জোটই নির্বাচনের মূল নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠছে। এর মধ্যেই ইসলামী ও সমমনা আটটি দল নিয়ে গঠিত ইসলামী ধারার জোট সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ইসলামপন্থী দলগুলোর ঐক্য ছিল সবচেয়ে আলোচিত ও প্রত্যাশিত দাবি। পরিবর্তনের অঙ্গীকারে সংঘটিত সাম্প্রতিক গণবিপ্লবের পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছাড়া প্রায় সব ইসলামী দল এক মঞ্চে আসায় এটিকে ইসলামী রাজনীতির জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন ফটিকছড়ির ভোটাররা।

তবে বাস্তবতা হলো, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে প্রায় সব দল নিজ নিজ প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখনো পর্যন্ত ৮ দলীয় জোটের একক প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই অনিশ্চয়তা ফটিকছড়িতে আরও স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। কে পাচ্ছেন এই আসনে জোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলোচনা ও কানাঘুষা।

ফটিকছড়িতে বর্তমানে মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং খেলাফত মজলিসের পৃথক প্রার্থী। তবে ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মূলত নেজামে ইসলাম পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ঘিরেই।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির প্রার্থী শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরে ফটিকছড়িতে পরিচিত একটি নাম। তার প্রতিষ্ঠিত দাতা সংগঠন বাংলাদেশ এহইয়াউস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উপজেলার বাগান থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও মানবিক সহায়তামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনার কারণে তিনি এলাকায় একজন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ নুরুল আমীন আগে ফটিকছড়িতে তেমন পরিচিত না হলেও তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। জামায়াতের সুসংগঠিত সাংগঠনিক কাঠামো, নিয়মিত গণসংযোগ এবং মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তার কারণে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই ভোটারদের মধ্যে পরিচিত হয়ে উঠছেন।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও ৮ দলীয় জোটের একক প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় জোটের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ফটিকছড়িতে ৮ দলের কোনো যৌথ কর্মসূচি বা সমন্বিত রাজনৈতিক তৎপরতাও দৃশ্যমান হয়নি, যা অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এদিকে কিছু মহলের দাবি, ফটিকছড়িতে ৮ দলীয় জোটের শরীক সংগঠনগুলোর মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে দূরত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে সমন্বয়ের ঘাটতি এবং ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির অভাব এই দূরত্বকে আরও স্পষ্ট করছে বলে মত স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের।

সাধারণ ভোটারদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি এবং শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহানের সামাজিক জনপ্রিয়তা যদি যৌথভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে ৮ দলীয় জোট ফটিকছড়িতে যেকোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। তবে শরীকদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে ‘আমও যাবে, ছালাও যাবে’—এমন পরিস্থিতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত ৮ দলীয় জোট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় এবং কবে নাগাদ ফটিকছড়িবাসী জানতে পারবেন তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top