মোঃ নজরুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে টি.এম. তাসনিম তাপস্বী। অভাব-অনটন, পারিবারিক নির্যাতন, জমি-জমা সংক্রান্ত জটিলতা ও আর্থিক সঙ্কটের মতো শত বাধা অতিক্রম করে অদম্য মেধা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, বরং সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত।
তাসনিমের বাবা মো. মোশরাফুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মী। নিকট আত্মীয়দের দ্বারা পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে নানা অত্যাচার, নির্যাতন, মিথ্যা অপবাদ, হামলা ও হত্যার চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লোভী স্বজনদের কারণে ভিটেবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে জবরদখলের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছেন মোশরাফুল ইসলাম। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্তরা—স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির মাধ্যমে পরিবারের সব স্বপ্ন যেন তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় বারবার মিথ্যার কাছে সত্য পরাজিত হওয়ার কারণে প্রাণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে মোশরাফুল পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে শেরপুর শহরে একটি জীর্ণশীর্ণ ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত অনিরাপত্তা ও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে জীবনযাপন করছেন তারা।
এমন প্রতিকূল পরিবেশেও মোশরাফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দুই সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। অভাবের মধ্যেও কন্যা তাসনিম তাপস্বী ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ২০২৫-২০২৬ সেশনের এমবিবিএস ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তাসনিম নিজে জানান, কলেজে আসা-যাওয়া ছাড়া বাকি সময়টা তিনি পুরোটা বইয়ের সঙ্গে কাটিয়েছেন। কোনো প্রাইভেট বা কোচিং ছাড়াই নিজের অধ্যবসায়ে এ সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
বর্তমানে মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। মেডিকেলে পড়াশোনার উন্নত খরচ বহন করা তাদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শেরপুরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইন-বিচার বিভাগের দায়িত্বশীলদের সহযোগিতা পেলে তাসনিমের মতো মেধাবী ছাত্রী একজন দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে সমাজের সেবা করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তাসনিম তাপস্বীর এ সাফল্য প্রমাণ করে যে, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কোনো বাধাই মানে না। তার এ জয় শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বপ্ন দেখার এবং তা পূরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজের সচেতন মহলের কাছে আহ্বান—এমন মেধাবীদের পাশে দাঁড়ান, যাতে তারা দেশের জন্য আরও বড় অবদান রাখতে পারেন।