২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সৈনিক শামীম রেজার বাবার আকুতি : আমার বাবার কেউ কোনদিন বলতে পারবে অন্যায় করেছে

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় রাজবাড়ীর সন্তান সৈনিক শামীম রেজার নিহত শামীম রেজার বাবা আলম ফকির জানাযার জামাযের পুর্বে জড়িত কন্ঠে আক্ষেপ করে বলেন, আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম, আমার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে আর নেই। কি নিয়ে বাজবো আমি। আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম তুমি কোন অন্যায় করবে না। আমি যেন তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না শুনি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না শুনলেও আজ তাকে খুন হতে হলো। আল্লাহ তাদের বিচার করবে।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ২ টার সময় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে নিহত শামীম রেজা মরদেহ কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এসে পৌঁছে। সেখান থেকে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। সেখানে রাষ্টীয় মর্যাদা শেষে নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় কবর স্থানে দাফন করা হয়।
জানাযার পুর্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেঃ আরিফ আল করিম, বাবা আলম ফকীর, চাচা হয়দার আলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি শামস শাদাত মাহমুদ উল্লাহ প্রমুখ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শামীম রেজা ৩ভাই, ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। ২ বছর আগে বিয়ে করেন। কোন সন্তান নেই। ৮ বছর আগে চাকুরী পায়। তার স্ত্রী আলিফা ইয়াসমিন। তার মা চম্পা বেগম। ২ ভাই সোহেল রানা, সোহান ফকির, বোন মরিয়ম খাতুন।

স্বজনেরা জানায়, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম রেজা ছিলেন সবার বড়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে সুদানে যান। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় তিনি নিহত হন।
এসময় রাজবাড়ী-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ হারুন-অর রশীদ সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

জানাগেছে, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে ৪ টায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কতৃক ড্রোন হামলা পরিচালনা করে। এ হামলায় দায়িত্বরত ৬ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং ৮জন শান্তিরক্ষী আহত হন। এরমধ্যে কর্পোরাল মোঃ মাসুদ রানা, এএসসি (নাটোর), সৈনিক মোঃ মমিনুল ইসলাম, বীর (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা, বীর (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল, বীর (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ), লন্ড্রি কর্মচারী মোঃ সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা) শহীদ হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। শহীদ শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় নিদর্শন হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হচ্ছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top