সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (আয়াত ২২-২৪) ইসলামে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আয়াত হিসেবে বিবেচিত। এই আয়াতগুলো আল্লাহর গুণাবলি এবং তাঁর পরম ক্ষমতার বর্ণনা দিয়ে পূর্ণ। নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এই আয়াতগুলোর তিলাওয়াত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বিভিন্ন হাদিসে এ আয়াতগুলোর ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের আলোকে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত:
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে আরও বেশি তথ্য পাওয়া যায়। এসব হাদিসে উল্লেখিত ফজিলতগুলো একজন মুমিনের জীবনকে আল্লাহর নৈকট্য এবং তাঁর করুণা অর্জনের পথে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
নিচে আরও কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
- রাতের তিলাওয়াতের ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন, যারা সকালের সূর্য ওঠা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রাতে এই আয়াতগুলো পাঠ করলে গুনাহ মাফ এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়। (সূত্র: সুনান আদ-দারিমি, হাদিস নং ৩৪২২)
- শয়তানের থেকে রক্ষা: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, “যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখবেন।” (সূত্র: মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ২৩০৪৫)
- কবরের আজাব থেকে মুক্তি: একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা নিয়মিত সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে, আল্লাহ তাদের কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দেবেন এবং তাঁদের সম্মানে ফেরেশতারা সালাম জানাবে। (সূত্র: মুসনাদ আল-শামি, হাদিস নং ১৮০৩)
- শহীদের মর্যাদা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ করবে এবং সেদিন মৃত্যু বরণ করবে, সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।” (সূত্র: আল-মুস্তাদরাক আলা আস-সহীহাইন, হাদিস নং ৩৬০৫)
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (আয়াত ২২-২৪) আরবি এবং তর্জমা:
আয়াত ২২: هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ
তর্জমা:
“তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সব কিছুর জ্ঞানী। তিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু।”
আয়াত ২৩:
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তর্জমা:
“তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি রাজাধিরাজ, পবিত্র, শান্তির আধার, বিশ্বাসের রক্ষক, নিরাপত্তা দাতা, সর্বশক্তিমান, প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত। আল্লাহ যেসব মিথ্যা ইলাহের সাথে শরিক করা হয়, তা থেকে তিনি পবিত্র।”
আয়াত ২৪:
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
তর্জমা:
“তিনি আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, স্রষ্টা, রূপদানকারী। তাঁর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সব তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনিই সর্বশক্তিমান, প্রজ্ঞাময়।”
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতকে আর কি নামে ডাকা হয়?
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতকে বিশেষভাবে “আয়াত আল-মুআক্কিরাত” (আয়াত আল-মু’আক্কিরাত) নামেও ডাকা হয়। এর অর্থ হলো “রক্ষাকবচের আয়াত” বা “রক্ষাকারী আয়াত”। এসব আয়াত আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও গুণাবলির বর্ণনা করে, এবং এগুলোর নিয়মিত তিলাওয়াত শয়তানের ক্ষতি এবং অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয়।
অনেক ইসলামিক স্কলারগণ এই আয়াতগুলোর ব্যাপক গুরুত্বের কারণে এগুলোকে বিশেষ এই নামে অভিহিত করেছেন, কারণ এগুলো আল্লাহর প্রশংসা, মহিমা ও কুদরত নিয়ে আলোচনা করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য নিরাপত্তা ও বরকতের উৎস হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার:
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত হাদিসের আলোকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর নিয়মিত তিলাওয়াত একজন মুসলিমের আত্মিক উন্নতি, নিরাপত্তা, এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত লাভের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আল্লাহর গুণাবলি ও মহিমা স্মরণ করার মাধ্যমে এসব আয়াত পাঠ করলে একজন মুসলিম তাঁর দৈনন্দিন জীবনে শান্তি, সফলতা এবং পরকালে মুক্তির পথ খুঁজে পায়।