২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

আধুনিক যুগেও জবিতে রেজাল্ট জানার মাধ্যম নোটিশ বোর্ড

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি:

প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে এখনও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য নোটিশ বোর্ডের উপর ভরসা করতে হয়।

যেখানে দেশের অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে রেজাল্ট দেখার ব্যবস্থা করেছে, সেখানে জবি শিক্ষার্থীদের নোটিশ বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ফলাফল জানতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পর তা নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো হয় বা সরাসরি বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এতে সময় অপচয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে ফলাফল পেতে দেরি হয়, যা উচ্চশিক্ষা বা চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।”

শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট অনলাইনে দেখার সুবিধা চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও আধুনিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করা হোক।

ব্যবস্থাপনা বিভাগ শিক্ষার্থী ফেরদৌস শেখ বলেন, “বর্তমান আধুনিক এই যুগে বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের একাডেমিক কার্যক্রম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিচালনা করছে। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট এখনো অনলাইনভিত্তিক সিস্টেমে প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদেরকে ফলাফল জানার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।”

ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, “ফলাফল জানতে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, কখনো আবার একাডেমিক অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যা সময় ও মানসিক চাপ দুটোই বাড়ায়। এটা শুধু প্রযুক্তিগত পিছিয়ে পড়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটি চিত্র। দ্রুত অনলাইনে রেজাল্ট দেখার সুবিধা চালু করা হলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমও আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, “এখনো আমাদের রেজাল্ট সিস্টেমটি পুরোপুরি ম্যানুয়াল। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা চাই, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি আধুনিক, ডিজিটাল রেজাল্ট সিস্টেম চালু হোক, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার রেজাল্ট অনলাইনে, নিজ নিজ আইডি ব্যবহার করে দেখতে পারবে। এতে অনেক সময় বেঁচে যাবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কম হবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই প্রস্তাব যথেষ্ট যৌক্তিক। যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তাদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। কিছু বিভাগ ইতোমধ্যেই নিজস্বভাবে অনলাইনে রেজাল্ট দিচ্ছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “এই বিষয়ে এখনো কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিক্ষার্থীরা নিজ বিভাগ থেকে ফলাফল জানতে পারছে।”

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে অনলাইন রেজাল্ট সিস্টেম চালু রয়েছে। একই সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে এরূপ সেবা যদি সম্ভব হয় তবে জবিতে কেন তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেটা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top