১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

অনিরাপদ জীবনযাপন জবি কর্মচারীদের

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি

ঝুঁকিপূর্ণ, ফাটলধরা অনিরাপদ বাণী ভবনেই বছরের পর বছর ধরে থাকছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ আবাস: পাস্তর ক্ষয়ে যাওয়া দেয়াল আর বড় বড় ফাটল ধরা ছাদ- এমন ঝুঁকিপূর্ণ বাণী ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই থাকছেন এসব কর্মচারীরা।

আইসিটি সেলের কর্মচারী সজীব জানান, “১০০ বছরের অধিক পুরাতন এই ভবন। দোতলার ছাদে অনেক বড় ফাটল ধরেছে। একপাশে ছাদ ভেঙে পড়ে গেছে। ওইপাশে কেউ থাকে না। আরো জানা যায়, ভবনটিতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। ফলে কর্মচারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনও ব্যাহত।

আইসিটি সেলের কর্মচারী সজীব আরো জানান, “জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন ছাত্রদের হল ছিল এটা, এখানে কলেজ থাকাকালীন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়নি, প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়নি। তাই অনেক আগেই লাইন কেটে দিছে বিদ্যুৎ অফিস। প্রায় পনেরো-বিশ বছর আগে থেকে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আমরা পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ এখানে আছি, সৌর লাইট জ্বালিয়ে থাকি। আমাদের পূর্বে যারা ছিলেন তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতের কাজ করতেন।”

জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এমন পরিবেশে কেন থাকেন তা জিজ্ঞেস করা হলে কর্মচারীরা বলেন, “বেতনের স্বল্পতা ও অস্থায়ী হাজিরাভিত্তিক চাকরি হওয়ার কারণে ব্যয়ভার কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকেন তারা।”

ভবনটির বাসিন্দা অধিকাংশ কর্মচারী স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। অনেকের চাকরি স্থায়ীও হয়নি। হাজিরাভিত্তিক বেতন পান তারা। এমএলএসএস সমমান কর্মচারী পান হাজিরাভিত্তিক দৈনিক ৬০০ টাকা, অফিস সহকারী ও সমমান কর্মচারী ৭০০ টাকা এবং অর্থ-হিসাব সহকারী সমমান কর্মচারী ৮২০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থ-হিসাব সহকারী কর্মচারী বলেন, “মাসে শুক্র-শনি মিলিয়ে আট নয়দিন সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। সরকারি বন্ধ থাকে অন্তত দুই-তিন দিন। ফলে মাসে দশ-বারো হাজার টাকা বেতন তুলতেও কষ্ট হয়। আবার ঈদ কোরবানি ও গ্রীষ্মের ছুটিতে লম্বা বন্ধ থাকলে মাসে পাঁচ হাজার টাকাও পাই না।”

সমাজকর্ম বিভাগের অফিস সহায়ক কাজী মুহিন বলেন, “খুব অল্প বেতনে চাকরি করি। এই টাকা দিয়ে পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য, তাই খরচ কমাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এখানে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে যেন এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছেড়ে অন্যত্র যাই। কিন্তু আমরা নিরুপায়।”

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মী ওমর আলী মাঝি বলেন, “বাণীবভনে ভাঙ্গাচূড়া ও অনিরাপদ জায়গায় থাকি আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি যদি আমাদের থাকার নিরাপদ জায়গা করে তবে আমাদের সুবিধা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “কর্মচারীদের আবাসন সংকট অনেক আগে থেকেই চলে আসতেছে। আমাদের নতুন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই দুটো জায়গায় তাদের অন্তর্ভুক্ত বা একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।”

ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে ড. করিম বলেন, “ন্যূনতম মজুরির বিষয়টা আইন না দেখেই বলা যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে আমরা যারা দায়িত্বে আছি আমরা কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। অস্থায়ী কর্মচারীরা বেতন ও সুযোগ-সুবিধা একটু কম পায়। তবে তারা যা বলেছে তার চেয়ে একটু বেশি তারা পান। মনে রাখতে হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট স্বল্পতা আছে। তারপরও আমরা তাদেরকে একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।”

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top