মাওলানা আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
সম্প্রতি এক সরাসরি লাইভ আলোচনায় ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেত্রী উমামা ফাতেমা দেশের আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্যে ‘হারামজাদা’, ‘গবেট’ ইত্যাদি অশালীন ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করলে সারাদেশের ইসলামপন্থী মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, উমামা ফাতেমার গ্রামের এলাকা চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ধর্মপ্রাণ জনতা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ইসলামী সংগঠন এবং সাধারণ মুসলিম জনতা ঘোষণা দেন — “উমামা ফাতেমার মতো আলেম-বিদ্বেষী নারীবাদীর এই মাটিতে কোনো ঠাঁই নেই। তাকে ফটিকছড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ইসলামী শিষ্টাচার শেখাতে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।”
এদিকে, ‘নারী সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক ঘোষিত কুরআন-সুন্নাহবিরোধী ১০ দফা সুপারিশের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দেশব্যাপী আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এর বিরোধিতায় মাঠে নামে কয়েকটি নারীবাদী ও বামপন্থী সংগঠন। ‘নারী অধিকার ফোরাম’, ‘বাংলাদেশ লিবারেল উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডব্লিউএ)’ এবং ‘স্বাধীন নারী সংহতি পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে হেফাজতের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। অভিযোগ করা হয় — নারী অধিকার ও সমানাধিকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে নারী অবমাননা করা হয়েছে।
এই সংগঠনগুলোকেই নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ১০ দফার নেপথ্যের প্রধান উদ্যোক্তা এবং উমামা ফাতেমার সরাসরি মদদদাতা বলে ইসলামী মহল দাবি করেছে।
বিতর্কিত ১০ দফা সুপারিশে যা রয়েছে: নারীর সমান উত্তরাধিকার, বহুবিবাহ নিষিদ্ধ, ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার’ মতবাদ, দত্তক সন্তানকে পূর্ণ উত্তরাধিকার, যৌনকর্মীদের শ্রমিক মর্যাদা যা ইসলামী শরীয়াহবিরোধী বলে আলেম সমাজ এগুলোকে ধর্মদ্রোহী ও অবৈধ ঘোষণা করেছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বলেছেন, “উমামা ফাতেমা আলেম সমাজের জন্য যে ভাষা ব্যবহার করেছে, তা নজিরবিহীন। ইসলামে আলেম-ওলামার মর্যাদা অবমাননা করা মারাত্মক গুনাহ। উমামাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে ইসলামী সমাজ তার বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।” তবে তাঁরা আহ্বান জানিয়েছেন, কেউ যেন প্রতিবাদের নামে বডি শেইমিং বা অশালীন শব্দ ব্যবহার না করেন।
ফটিকছড়ির বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উমামা ফাতেমাকে ফটিকছড়িতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্টের মাধ্যমে অসংখ্য ইউজারকে এই ঘোষণা দিত দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলন এক বিবৃতিতে জানায় — “উমামা ফাতেমা আমাদের সেরে তাজ উলামায়ে কেরামকে অশালীন ভাষায় গালি দেওয়ার অপরাধে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ তাকে সম্মান দিয়েছিল, কিন্তু তার বক্তব্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। আমরা কওমী জুলাই যোদ্ধারা তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।”
বিষয়টি ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।