ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি:
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে ও আবাসন ভাতা, হল নির্মাণসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ০৪ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৬ মে) বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহীদ রফিক ভবনের নিচে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীদেরকে ‘প্রহসনের বাজেট মানি না মানব না’, ‘বৈষম্যের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সমাবেশে বক্তারা ইউজিসির বাজেটে ধারাবাহিক বৈষম্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং জবির বাজেট বৃদ্ধির জোর দাবি তোলেন।
২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী কিশোর সাম্য জানান, “আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই সাহসিক ভূমিকা রেখেছে। গুলির মুখেও আমরা পিছু হটিনি। অথচ ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে ঢাবি, চবি ও অন্যান্য নামী বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা কি মানুষ না? তারা এসি রুমে বসে আয়েশ করবে, আর জবি শিক্ষার্থীরা মেসে না খেয়ে থাকবে? আমরা তো চাকরি চাইনি, এসিও চাইনি। আমরা আমাদের যোগ্যতা দিয়েই জীবন গড়ব। কিন্তু আমাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিন। আমাদের আর ঠকাবেন না। পাগলদের ক্ষেপাবেন না—কারণ পাগল সামলানো আপনাদের সাধ্যের বাইরে।”
২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী শাহীন মিয়া বলেন, “দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলার শিকার হয়ে আসছে। শুধু একটি নামধারী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড় করানো হয়েছে—সুবিধা নেই বললেই চলে। পূর্ববর্তী সরকার হোক বা ইউজিসি, কেউ আমাদের নিয়ে ভাবেনি। আমরা রক্ত দিয়ে এই সরকার গড়েছি, কিন্তু তারা কি সেই পুরনো পথেই হাঁটছে? ঢাবির জন্য বরাদ্দ ৩০০–৪০০ কোটি, আর জবির জন্য নামমাত্র বাজেট! আমরা আর বসে থাকব না। প্রয়োজনে ইউজিসি ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ.কে.এম রাকিব হোসেন বলেন, “আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে চলুক, অন্যথায় চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক।”
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো-
১. ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা
২. ক্যাম্পাস সংস্কার এবং পুরান ঢাকায় ড. হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ আগামী ১০ মে’র মধ্যে শুরু করা
৩. প্রশাসনের প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও হল নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্রিফ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা এবং
৪. আগামী ১৫ মে’র মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা।
এই সময় শিক্ষার্থীরা আরো জানান, “২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্যে আবাসন সংকট, ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে; যা শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেটে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে বলে দাবি জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।”
বিক্ষোভ মিছিলটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ভিসি ভবনের সামনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।