নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমেদ বিন হামাদ আল-খালিলি সম্প্রতি ভারত সরকারের প্রতি মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত যেন অতীতের মুসলিম শাসকদের দয়া ও সহানুভূতির কথা স্মরণ করে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে মুফতি পাকিস্তানকে ‘আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের’ জন্য অভিনন্দন জানান—যার মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে ভারতের দিকেই ইঙ্গিত করেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান যেন দৃঢ়তা ও শক্তির সঙ্গে নিপীড়িত মুসলিম ভাইদের পাশে দাঁড়ায়, বিশেষ করে পবিত্র আল-আকসা ভূমিতে।
মুফতি আরও বলেন, ভারতের সরকার যেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতার মনোভাব পরিহার করে এবং স্মরণ করে যে অতীতে ভারতের মুসলিম শাসকেরা ধর্ম নির্বিশেষে জনগণকে দয়া ও সহনশীলতায় শাসন করতেন।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের পূর্বে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দীর্ঘ সময় মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল। বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্য ১৬শ থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল শাসন করে।
ওমান সরকার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশ দুটি ওমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। একইসঙ্গে ওমান পাকিস্তানের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমান্তও ভাগ করে নেয়।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অবস্থিত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী গোয়াদর ১৭৮৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতক ওমানের শাসনে ছিল। ১৯৫৬ সালে নতুন স্বাধীন ভারতকে গোয়াদর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল ওমান, কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৫৮ সালে ওমান গোয়াদর পাকিস্তানকে বিক্রি করে।
২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
৭ মে ভারত পাকিস্তানি ভূখণ্ডে প্রাণঘাতী হামলা চালায়, যাতে ইসলামাবাদের দাবি অনুযায়ী ৩৬ জন নিহত হন। পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ১৬ জন নিহত হওয়ার কথা জানায় ভারত।
প্রায় চার দিন ধরে চলা সংঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। ভারত অঞ্চলটিকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে, অন্যদিকে পাকিস্তান চায় কাশ্মীরিদের স্ব-নির্ধারণের অধিকার দিতে একটি গণভোট হোক।
গ্র্যান্ড মুফতির মন্তব্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এসেছে।
২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, যার শাসনামলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মনোভাব ও মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সমালোচকরা মনে করেন।
ব্রিটিশ ফরেন অফিসের একটি ২০০২ সালের প্রতিবেদনে গুজরাট দাঙ্গার সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘সরাসরি দায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মুসলমান নিহত হন।