আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
❝চট্টগ্রাম সফরে লাল গালিচা নয়, কাঠের চেয়ারে বসেই উন্নয়ন বার্তা দিলেন অধ্যাপক ইউনূস। কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর, নতুন হাসপাতাল, বন্দর আধুনিকায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখে গেলেন এক ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রীয় বার্তা।❞
দায়িত্বশীল রাষ্ট্র পরিচালনায় আলোকিত এক ভিন্নধর্মী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবারের একদিনের সফরে তিনি উন্নয়ন, মানবিকতা ও স্মৃতিমাখা বার্তায় চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিলেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল ৯টা ২১ মিনিটে অবতরণের পর পুরো সফরজুড়ে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা, লাল গালিচা, কিংবা রাজনৈতিক শোডাউন। কাঠের চেয়ার আর লোহার বেঞ্চে বসেই সভা-পর্যালোচনায় অংশ নেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মানের মাস্টারপ্ল্যান
বন্দরে পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতি এগোবে না।” এরপর মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ১৭ হাজার কোটি টাকার বে-টার্মিনাল, অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম, রাবার টায়ার ক্রেন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কথা জানান।
১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার কালুরঘাট সেতু
প্রধান উপদেষ্টা কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, “কালুরঘাট সেতু শুধু অবকাঠামো নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জীবনের অংশ।”
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাগজে নয়, বাস্তবে কাজের নির্দেশ
তিনি কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেন, “এই বর্ষায় জলাবদ্ধতা অর্ধেকে নামাতে হবে। কাগজে আলোচনা নয়, বাস্তবে মানুষের ভোগান্তি লাঘবই অগ্রাধিকার।”
স্বাস্থ্য খাতে বড় ঘোষণা
চট্টগ্রামে ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। হাটহাজারী ও কর্ণফুলীতেও দুটি হাসপাতালের কথা জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। হার্ট ফাউন্ডেশনের জন্য জমির দলিল হস্তান্তরও সম্পন্ন হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট ও স্মরণীয় সমাবর্তন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,
“স্বপ্ন না দেখে গর্তের মধ্যে ঢুকে থাকলে, যা আছে তা-ই মেনে নিলে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

জোবরা গ্রামে ফিরে শুরু দিনের স্মৃতি
জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম শাখা পরিদর্শন করেন। এখান থেকেই ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্রঋণ যাত্রা শুরু হয়েছিল। একই দিনে নিজের পৈতৃক ভিটা বাথুয়া গ্রামেও যান তিনি। ১৮ বছর পর সেখানে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
চট্টগ্রামে ভিন্নধর্মী, কর্মমুখর ও আবেগঘন এই সফর শেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় ফিরে যান অধ্যাপক ইউনূস।