নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফেনীর আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের নামে অঢেল অর্থ-সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি কোনো পেশায় না থেকেও তার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও অর্থের মালিকানা রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ফেনীর প্রভাবশালী সাবেক এই সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর নামে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমের নামে ২৬ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৩২১ টাকার বিনিয়োগ পাওয়া গেছে ৮টি প্রতিষ্ঠানে।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ফেনী পৌর সদর এলাকায় নিজাম হাজারী ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার ২৮০ টাকা দলিলমূল্যে ১৩০০ শতক জমি কিনেছেন। নুরজাহান বেগমের সঙ্গে যৌথ নামে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাটসহ আরও তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া, পল্টন, মোহাম্মদপুর ও কাকরাইলেও তার নামে তিনটি ফ্ল্যাট আছে। মোহাম্মদপুরে চার কাঠা জমির ওপর একটি চারতলা ভবন এবং চট্টগ্রামে দুটি ফ্ল্যাটসহ জয়দেবপুরে জমিসহ স্টিল স্ট্রাকচারের একটি স্থাপনার মালিকানাও তার রয়েছে।
নিজাম হাজারীর নামে ৩৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে ১২ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫০ টাকা। অন্যদিকে, নুরজাহান বেগমের ২০টি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৫ টাকা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, নুরজাহান বেগমের নামে রাজধানীতে আরও পাঁচটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। গুলশান, মোহাম্মদপুর, পল্টন, কাকরাইল এবং চট্টগ্রামের খুলশি এলাকায় এসব সম্পত্তি রয়েছে।
দুদক আরও জানায়, নুরজাহান বেগমের নামে স্নিগ্ধা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, স্নিগ্ধা ইক্যুইটিজ লিমিটেড, স্নিগ্ধা ডিজাইন লিমিটেড, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড এবং এমএন ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারিতে বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে ৮০ লাখ টাকা।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন এসব সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, এসব সম্পদ যেন হস্তান্তর বা বিক্রি করতে না পারে। পাশাপাশি, এই সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা জানান, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নুরজাহান বেগমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফেনীর আলোচিত নেতা জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক অবসানের পর তার শিষ্য হিসেবে নিজাম হাজারীর উত্থান ঘটে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতার ক্ষমতাকালীন সময়ে নুরজাহান বেগম বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
দুদক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিজাম হাজারী তার রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। আদালতের নির্দেশে এই সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
নুরজাহান বেগমের বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানের এই ঘটনাটি রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।