নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রায় ৫৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি আবার চালুর পরিকল্পনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, চীনের সহায়তায় এই বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হচ্ছে—যা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক।
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, লালমনিরহাট বিমানবন্দর ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি সংবেদনশীল ‘চিকেন নেক’ করিডরের কাছাকাছি। যদিও গুগল ম্যাপ ও বিভিন্ন দেশীয় মানচিত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বিমানবন্দরটি শিলিগুড়ি করিডর থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে।
প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিক রত্মদ্বীপ চৌধুরী লিখেছেন, বিমানবন্দরের পুনর্গঠনে চীনের সহায়তা থাকলে সেখানে রাডার, নজরদারি যন্ত্র বা এমনকি ফাইটার জেট স্থাপন করা হতে পারে—এটি ভারতের জন্য একটি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ কারণেই ভারত ত্রিপুরার কাইলাশহর বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে প্রয়োজনে এটি সামরিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
এনডিটিভি আরও দাবি করেছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারতের তুলনায় চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তনের পর এই ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ভারতের কৌশলগত চিন্তার ওপর প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের এই পাল্টা উদ্যোগ শুধু লালমনিরহাটকে কেন্দ্র করে নয়, বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কাইলাশহর বিমানবন্দর, যা ১৯৭১ সালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, সেটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরায় দ্বিতীয় বড় বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সেনাসদরে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, “লালমনিরহাট বিমানবন্দর একটি জাতীয় সম্পদ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ফলে এটিকে নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, ওই অঞ্চলে স্থাপিতব্য এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এবং দেশের এভিয়েশন খাতের বিস্তারকে মাথায় রেখে এ বিমানবন্দর সচল করা হচ্ছে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জাতীয় স্বার্থে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হলেও, ভারতের উদ্বেগ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবেশী গণমাধ্যমে। বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।