নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুয়াকাটায় উদ্বোধনের আগেই বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে নতুন নির্মিত ১৩০০ মিটার দীর্ঘ মেরিনড্রাইভ সড়ক। এর এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। ঘটনাটি স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নির্মাণ কাজের গাফিলতি ও প্রকল্পের অদূরদর্শিতার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাত্র দুই ঘণ্টার ঢেউয়ের তাণ্ডবেই ভেঙে যায় সড়কটির বড় একটি অংশ। পৌরসভার উদ্যোগে সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে হোটেল সিভিউ থেকে জাতীয় উদ্যানের ঝাউবন পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছিল এ সড়ক। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় চার কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
কুয়াকাটা পৌরসভার তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গৃহীত প্রকল্পটিতে কোনো ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই সাগরের পানির স্তরে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সড়ক নির্মাণের কাজ পায় পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—মোল্লা ট্রেডার্স, আবরার ট্রেডার্স এবং এসএম ট্রেডার্স। তিনটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে।
ঘটনার পর পরই স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেককে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এসএম ট্রেডার্সের মালিক সাদ্দাম মাল দাবি করেছেন, তিনি সরাসরি কাজটি করেননি, বরং সাব-কন্ট্রাকে রুহুল আমিন নামে একজন কাজটি করেছেন। তার মতে, এটি সৈকতের ভাঙন রোধে সহায়ক ছিল, যদিও তিনি স্বীকার করেন এটি একটি অপরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প ছিল।
সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, প্রকল্পে তার কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। তিনি দাবি করেন, প্রকল্পটি তার মেয়াদকালের শেষে সৈকতের আরও ১০০ ফুট ভেতরে স্থানান্তরিত হয় এবং গাইডওয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, পরিকল্পনাহীনতা ও স্বজনপ্রীতি দিয়ে গঠিত প্রকল্পের ফলেই এমন বিপর্যয় ঘটেছে। তারা দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।