১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

আইএস-কে দমনে ‘চমৎকার অংশীদার’ পাকিস্তান, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে পাকিস্তানের ভূমিকাকে ‘অসাধারণ অংশীদারিত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তা। এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী দিবসে অংশ নিতে।

১৪ জুন আমন্ত্রণপ্রাপ্ত আসিম মুনির

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড বৃহস্পতিবার (১২ জুন) জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আগামী ১৪ জুন অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী দিবসে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কমান্ড সেন্টকম-এর প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা ওয়াশিংটনে সেনেটের সশস্ত্র পরিষদ কমিটিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, “পাকিস্তান এখন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয়, এবং তারা এই লড়াইয়ে আমাদের এক অসাধারণ অংশীদার।”

তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্প্রতি আইএস-কে-র সিনিয়র কমান্ডার মোহাম্মদ শরিফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি ২০২১ সালের কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার অন্যতম অভিযুক্ত। সেই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা এবং ১৬৯ আফগান নিহত হয়েছিলেন।

ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া

এদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণকে ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “এই মুনিরই পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার আগে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী বার্তা দিচ্ছে?”

পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ১৬ এপ্রিল এক ভাষণে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবনরেখা’ বলে উল্লেখ করেন এবং ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’কে সমর্থন জানিয়ে মুসলমানদের হিন্দুদের থেকে নিজেদের পার্থক্য বোঝাতে বলেন। ভারতের অভিযোগ—এই বক্তব্যই ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম প্ররোচনাদাতা। হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক।

কাশ্মীর ইস্যুতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার ইঙ্গিত

এই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আবারও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন আগ্রহী। যদিও নয়াদিল্লি বরাবরই জানিয়ে এসেছে, কাশ্মীর একান্তই ‘দ্বিপাক্ষিক’ বিষয়, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার সুযোগ নেই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় এমন পদক্ষেপ নিতে চান, যা দীর্ঘমেয়াদি বিরোধ নিরসনে সহায়ক হয়। কাশ্মীর ইস্যুতেও তার ভূমিকা নতুন কিছু নয়।”

ট্রাম্প প্রশাসনের ভারসাম্য কৌশল

জেনারেল কুরিল্লা আরও বলেন, “আমরা চাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে, আবার পাকিস্তান ও অন্যান্য মধ্য এশীয় অংশীদারদের সঙ্গেও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বাড়াতে।” তিনি বলেন, “পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে, কেবল ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ধরে রাখলে আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।”

পটভূমি ও পারমাণবিক উদ্বেগ

ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছেন, ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাত তার প্রশাসনের মধ্যস্থতায় নিয়ন্ত্রণে আসে। না হলে সেটি ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারত।

এই প্রেক্ষাপটে আসিম মুনিরকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ, একদিকে ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্যের প্রতিফলন, অন্যদিকে নয়াদিল্লির জন্য এক কঠিন কূটনৈতিক বার্তা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top