রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
ঈদুল আজহা সামনে রেখে লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা যেন এই সময়টিকে যাত্রী হয়রানির সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। অথচ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব।
শনিবার লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার বাস কাউনন্টার ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেক উপজেলা বাস কাউন্টার এ একই চিত্র। তারা যাত্রীর নিকট থেকে ৮ থেকে ১ হাজার টাকা বেশী আদায় করছে। আবার এ,সি বাস গুলি প্রতি কাউন্টার এ ন্যয্য ভাড়ার চেয়ে ১ হাজার টকা করে বেশী নিচ্ছে। লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা গামী বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে গড়ে ৭ শত থেকে ৮শত টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ সময় যেসব বাসে ১২০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, সেখানে এখন ১৫শত থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকাগামী এক যাত্রী শামীম আল মামুন বলেন, “আমার পরিবারসহ ঈদের আগে ঢাকা যেতে হবে। নন এসি বাসে স্বাভাবিক সময় ৭ শত টাকা লাগলেও আজ ১৬শত টাকা চেয়েছে।প্রশ্ন করতেই উত্তর দিল—‘ঈদের সময় বাড়তি ভাড়া লাগবেই।’”
আরেক যাত্রী বৃষ্টি বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। প্রশাসন চুপ কেন?
বাস কাউন্টারে কথা বললে পরিবহন কর্মীরা জানান, ঈদের সময় যানজট, যাত্রী চাপ, অতিরিক্ত খরচ ইত্যাদি কারণে তারা ‘বিশেষ ভাড়া’ নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক বলেন, “ঈদের সময় ভাড়া একটু বাড়ে, এটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। সবাই নিচ্ছে, আমরাও নিচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রতি ঈদেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন না থাকায় তা কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে।লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান বা নজরদারির খবর পাওয়া যায়নি।
একজন গণপরিবহন বিশ্লেষক বলেন, “নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রশাসনের নীরবতা অনিয়মকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। প্রতি ঈদেই একই চিত্র পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার একদিকে ট্রেন ও লঞ্চে বিশেষ সার্ভিস চালু করছে, অন্যদিকে সড়কপথে যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে অভিযান ও হটলাইন চালুর দাবি জানাচ্ছেন তারা।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা,পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নয়তো প্রতি বছর ঈদের আগেই বাড়তি ভাড়ার নামে এই ‘যাত্রী জুলুম’ চলতেই থাকবে।