খালিদ হোসেন হৃদয়, ভাঙ্গুড়া(পাবনা) প্রতিনিধি:
ঘর মানে শুধু টিন আর কাঠ নয়, সেখানে থাকে কারো শৈশব, কারো স্বপ্ন, কারো শেষ সম্বল। আর সেই ঘরই যদি একদিনের মধ্যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তাহলে ওই মানুষের হৃদয়ে আর কতটা পোড়ে, তা কেউ বুঝতে চায় না। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের বৃদ্ধমরিচ গ্রামের কাজিপাড়ার শাহাদত হোসেনের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ঘটে গেছে এমনই এক বেদনাবিধুর ট্র্যাজেডি। শাহাদত হোসেন কাজিপাড়ার মৃত বদিউজ্জামানের ছেলে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো , এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে দাবি ভুক্তভোগী শাহাদতের পরিবারের।
জানা গেছে, গত ৯ জুন দিবাগত রাতে খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ও মসজিদের মোয়াজ্জেন আব্দুল গণিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। পরদিন (১০ জুন) সকালে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহাদতকে হত্যাকারী সন্দেহ করে পুলিশে সপর্দ করে গ্রাম বাসি। পরে গ্রামের কিছু লোক মব তৈরি করে শাহাদতের বাড়ির সদস্যদের মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর শাহাদতসহ তার ছয় ভাই ও বোনের ঘরে একযোগে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। আগুনের শিখায় মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায় এক পরিবারের সাতটি শাখার শত বছরের জীবনের অর্জন। আজ তারা খোলা আকাশের নিচে, খাবার ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা মোট সাত ভাইবোন। আমাদের ঘরের নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ দুর্বৃত্তরা মব তৈরি করে লুট করে নিয়ে গেছে। এরপর আগুনে সব জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে দুইদিন ঘোরায়। পরে বলে, আদালতে যান। আমরা এখন রাস্তায় পড়ে আছি, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, যেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার হয়।”
ভুক্তভোগী পরিবারের আরেক সদস্য খাদিজা খাতুন বলেন, আমার স্বামীসহ আরো দুই দেবর প্রবাসে থাকে। তাদের দেওয়া সমস্ত স্বর্ণালংকারসহ টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তারপর বাড়িতে আগুন দিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছি আমাদেরকে। কিন্তু থানায় গিয়েও কোন বিচার পাচ্ছি না, আমরা এখন কোথায় যাব? কার কাছে যাবে?
তবে ভুক্তভোগীদের বলা অভিযোগ অস্বীকার করে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “হত্যার ঘটনায় মূল দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জীবন ও সম্পদের এমন ভয়ানক ক্ষতির পরেও পুলিশি সহায়তা না পাওয়ায় পরিবারগুলো চরম হতাশ। প্রশাসনের নীরবতায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং ক্ষতি গ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।