নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫% ভ্যাটকে অমানবিক, অযৌক্তিক ও সংবিধানবিরোধী বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ (সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা)। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেন, “এই কর আরোপ মূলত উচ্চশিক্ষাকে ধনীদের জন্য সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে এবং মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একপ্রকার শাস্তি।”
তিনি বলেন, ভ্যাট আরোপের এই সিদ্ধান্ত ‘জুলাই বিপ্লব’-এর মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষানীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার ভাষায়, “এটি এক ধরনের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রতিফলন, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকীকরণের পথে ঠেলে দিচ্ছে।”
বিবৃতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি ৭টি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি উপস্থাপন করেন:
১. শিক্ষা মৌলিক অধিকার, পণ্য নয়
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।” অথচ ভ্যাট বসিয়ে শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হয়েছে, যা সাংবিধানিক মূল্যবোধের বিরোধী।
২. মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি বোঝা
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। ১ লাখ টাকার ফি ভ্যাটসহ ১ লাখ ১৫ হাজার হয়ে যায়—এই অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা অনেক পরিবার বহন করতে অক্ষম।
৩. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত আসন, বিকল্প নেই
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় লক্ষাধিক আবেদনকারীর মধ্যে সুযোগ পায় মাত্র কয়েক হাজার। বাকিরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র ভরসা। সেখানে ব্যয় বাড়ানো মানে শিক্ষার পথ রুদ্ধ করা।
৪. মানসম্পন্ন শিক্ষা হুমকির মুখে
ভ্যাটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে শিক্ষক ছাঁটাই, কোর্স কমানো কিংবা গবেষণা কার্যক্রম সংকোচন করতে পারে, যা উচ্চশিক্ষার মান ধ্বংস করবে।
৫. আন্দোলন ও সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা
২০১৫ সালে ৭.৫% ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে সরকারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য করেছিল। এবার ১৫% কর চাপালে আরও বড় আন্দোলন এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
৬. করনীতির নৈতিকতা লঙ্ঘন
কর সাধারণত বিলাসপণ্য বা উচ্চআয়ের খাতে আরোপ করা হয়। শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়—এটি প্রয়োজনীয় ও মৌলিক। তাই শিক্ষা খাতে ভ্যাট বসানো করনীতির মৌলিক দর্শনের পরিপন্থী।
৭. রাজস্ব আদায়ের বিকল্প উৎস রয়েছে
বিলাসী বিদেশ সফর, তামাকজাত পণ্য, জুস-সফট ড্রিংকস, বড় করপোরেটদের কর ফাঁকি—এসব খাতে কর বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় সম্ভব। শিক্ষাকে শাস্তি দিয়ে নয়।
ছাত্র অধিকার পরিষদ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, অবিলম্বে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে শিক্ষা খাতকে করমুক্ত ঘোষণা করা হোক এবং একটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হোক।