মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী: প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন ও কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কাঁচা রাস্তার দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী অভিনব এক কর্মসূচি পালন করেছেন।
সোমবার (২৫ জুন) দুপুরে ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গনপত্যা (হড়াই ব্রিজ) হতে চন্দনী হাইওয়ে সংযোগ সড়কের কর্দমাক্ত অংশে ধানের চারা রোপণ করে তারা প্রতিবাদ জানান। এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে এ রাস্তায় কোনো উন্নয়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র দাস (৫০) বলেন, “একসময় হড়াই নদীই ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল পথ। নদী দিয়ে বড় বড় নৌকায় মালামাল পরিবহন করা হতো। নদীর দুই পাশে গড়ে ওঠে জনপদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে নদী তার নাব্যতা হারায়, ব্যবসায়িক পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই এ সড়কটি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলেও, এটি পাকা হয়নি।”
গনপত্যা হড়াই হতে হিরন্যকান্দি, মোহাম্মদপুর, বড় ভেল্লাবাড়িয়া, কাজিরাঙ্গা, দত্তপাড়া, ধুপুরিয়া হয়ে চন্দনী হাইওয়ের ‘ঢাকা–কুষ্টিয়া’ মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক প্রান্তে মাত্র এক কিলোমিটার এবং অপর প্রান্তে আধা কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। মাঝখানের পুরো অংশ কাঁচা ও কর্দমাক্ত।
রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, রোগী পরিবহনে বাধ্য হয়ে বাঁশের মাচা বা চাংগায় করে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। এরপরই পাকা সড়কে উঠে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সে তোলা সম্ভব হয়। শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ পথচারীরা প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
একজন গ্রামবাসী বলেন, “চলাচল তো দূরের কথা, এই কাদা রাস্তায় যেন ধান চাষের উপযুক্ত জমি হয়ে গেছে। তাই আমরা প্রতীকীভাবে ধানের চারা রোপণ করেছি। যদি কিছু ধান উৎপাদন হয়, দেশেরই কাজে লাগবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় নেতারা আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে যান, কিন্তু পরবর্তীতে আর ফিরে তাকান না।
একজন বলেন, “আমরা কি শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছি? সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার কি আমাদের নেই?”
ইসলামপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, ” এই সড়কের আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গণপত্যা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, আড়াবাড়ীয়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় ও আড়াবাড়ীয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাজধরপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কৈডাঙ্গা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, গোড়পালান সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, চন্দনী স্কুল এন্ড কলেজ, কৈডাঙ্গা মাদ্রাসা।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভরত কুমার দাসের ডেইরী ফার্মসহ ৪টি ডেইরী ফার্ম, গাজী পোল্ট্রি ফার্মসহ ৮ থেকে ১০টি পোল্ট্রি ফার্ম এবং নাসিরউদ্দিনের একটি মৎস হ্যাচারী এই সড়কের পাশে। এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ব্যবসায়ীক কাজে জনসাধারণ যাতায়াত করে থাকে। সড়কটির বেহালদশা দেখে আমি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় এমপি, এলজিইডি ও ইউএনও’র কাছে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন, কাজের অগ্রগতি শূন্য।”
রাজবাড়ী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউসুফ হোসেন বলেন, “রাস্তার বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়েছি। এটি আইডিভুক্ত রয়েছে। নতুন প্রকল্প হলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জনদুর্ভোগকে আমরা সর্বদা গুরুত্ব দেই। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।