আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তবর্তী বিতর্কিত এলাকায় টানা দ্বিতীয় দিন ধরে চলা সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৫ জন থাইল্যান্ডের নাগরিক এবং ১ জন কম্বোডীয় সেনা। উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার সকালে বিতর্কিত প্রেহা ভিহিয়া মন্দির এলাকায়। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, নিহতদের ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া ৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যারা বর্তমানে ৩০০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
কূটনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হওয়ায় থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে এবং নিজেদের কূটনৈতিক সম্পর্ক “সর্বনিম্ন পর্যায়ে” নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কম্বোডিয়াও তাদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করেছে।
সামরিক সংঘাতের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে থাইল্যান্ডের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের পর। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, থাই বিমান তাদের ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণ করেছে। থাইল্যান্ড এই দাবি অস্বীকার করলেও তাদের পক্ষ থেকে কম্বোডিয়ার দুটি সামরিক সদর দপ্তর “ধ্বংসের” দাবি করা হয়েছে।
একাদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রেহা ভিহিয়া মন্দিরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ চলছে। ১৯৬২ ও ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা কম্বোডিয়ার অংশ বলে ঘোষণা দেওয়া হলেও থাইল্যান্ডের কিছু গোষ্ঠী এতে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বেছে নেওয়ার জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত শুধু স্থানীয় সীমান্ত বিরোধই নয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি তৈরি করতে পারে। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যস্থতা ছাড়া এই সংকটের দ্রুত সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।