আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের ধারণা। ইউরোপীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার জন্যই এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকি ঘাঁটি থেকে একটি বিশেষায়িত সামরিক পরিবহন বিমান যুক্তরাজ্যের লেকেনহিথ এয়ার বেইসের উদ্দেশে রওনা দেয়, যা পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে তার ট্রান্সপন্ডার চালু রেখে উড্ডয়ন করেছিল, যা সাধারণত গোপনীয়তা বজায় রাখার নিয়মের ব্যত্যয়। এই অস্বাভাবিক পদক্ষেপকে রাশিয়ার উদ্দেশে ইশারা হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট দলিলে লেকেনহিথ ঘাঁটিতে পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়, যা এই অনুমানকে জোরালো করে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, মোতায়েনকৃত অস্ত্রগুলো সম্ভবত সর্বাধুনিক বি৬১-১২ মডেলের পরিবর্তনযোগ্য শক্তিসম্পন্ন পারমাণবিক বোমা, যা ০.৩ থেকে ৫০ কিলোটন পর্যন্ত বিস্ফোরণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদে সক্ষম। হ্যান্স ক্রিস্টেনসেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের মতে, এটি ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপে মার্কিন কৌশলগত পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রথম ঘটনা।
এই প্রসঙ্গে ইউরোপীয় বিশ্লেষক উইলিয়াম আলবেরক মনে করেন, “এটি রাশিয়াকে জানান দেওয়ার একটি কৌশল যে ন্যাটো তার পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করছে।” তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। এদিকে যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই বি৬১-১২ বোমা বহনে সক্ষম এক ডজন নতুন মার্কিন যুদ্ধবিমান ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সকে দীর্ঘদিন পর পুনরায় পারমাণবিক মিশনে সম্পৃক্ত করবে।
এই উন্নয়নের পটভূমিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে বাড়তি সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাশিয়াকে ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে আসতে না পারলে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। বর্তমানে বি৬১-১২ বোমা ইউরোপের ছয়টি ন্যাটো দেশের সাতটি ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে যেকোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত।