নিজস্ব প্রতিনিধি:
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বিস্ময়কর রাজনৈতিক ঘটনা। এ অভ্যুত্থানে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করলেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে শ্রমজীবী মানুষের। রাস্তায় লাশ পড়েছিল সেই রিকশাচালকের, নির্মাণ শ্রমিকের, হকারের—যাদের ঘামে গড়ে উঠছে আমাদের শহর, যাদের কষ্টে সচল থাকে আমাদের অর্থনীতি। অথচ আজ, এক বছর পার হয়ে গেলেও, তাদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তনের ছাপ দেখা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদেশে শ্রমজীবী মানুষের কোনো মর্যাদা নেই। রাজনৈতিক আন্দোলনে তাদের ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তাদের জীবনের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগ, বাসস্থান কিংবা ন্যায্য মজুরি নিয়ে সরকার ও নীতিনির্ধারকরা খুব কমই ভাবেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ আসে কেবল তখনই, যখন কথিত ‘উচ্চপদস্থ’ শ্রেণির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয়। তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি গঠিত বেতন কমিশনের মাধ্যমে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমরা একে বিরোধিতা করছি না। হ্যাঁ, আমলারা দেশের জন্য কাজ করেন, তাদেরও ন্যায্য সম্মান ও পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো,দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট করা, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নেওয়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো কমিশন নেই কেন? তাদের জন্য কি ‘শ্রমজীবী কল্যাণ কমিশন’ বা ‘ন্যায্য মজুরি বোর্ড’ থাকা উচিত নয়? গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেল, অথচ যাদের রক্তে সেই আন্দোলন দাঁড়িয়েছিল, তাদের জীবন আজও সেই রক্তমাখা মাটিতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমরা উন্নয়ন, স্মার্ট বাংলাদেশ, ডিজিটাল অগ্রগতি নিয়ে বড় বড় কথা বলি, কিন্তু যে শ্রমজীবী মানুষটি দিনে ১২ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে মাথার উপর ছাউনি দিতে পারে না, তার জীবনে তো সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে না।
আজ প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন নীতি এবং কার্যকর উদ্যোগ। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে,শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়, কোনো গণতন্ত্রই পূর্ণাঙ্গ নয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি আমাদের শুধু স্মরণ করার দিন নয়, এটি হোক আত্মসমালোচনার দিন। শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি ন্যায্য রাষ্ট্র গঠনের প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন।
শিক্ষার্থী, ফরহাদ সরকার
অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।