নিজস্ব প্রতিনিধি:
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে ঢাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ৭০৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা, দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিচারপতিরাও রয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীর ৫০টি থানায় এ মামলাগুলো নথিভুক্ত হয়েছে। সারাদেশে মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৬০২টি। এসব মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩ জন সাবেক মন্ত্রী, ১১ জন প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী, ৬৬ জন সংসদ সদস্য এবং ৮ জন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি রয়েছেন। এছাড়া ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার ৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব মামলা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, আইনানুগ প্রক্রিয়ায় মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে ৩৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ২১৪টি হত্যা মামলা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্যমতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজার আহত হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১২ হাজার ৮২৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৯৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে দলটির একটি বড় অংশ কারাগারে আটক রয়েছেন, অন্যদের অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
বিচার বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৩ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে মামলা করা হচ্ছে। আবার মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অভিযোগ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে বলে জানানো হয়েছে।