নিজস্ব প্রতিনিধি:
ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কৌঁসুলি মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, সিদ্দিক প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন এবং ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে তার ঠিকানা, একাধিক পাসপোর্ট এবং ভোটার তালিকার তথ্য রয়েছে, যা আদালতে উপস্থাপন করা হবে।”
বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সংস্থাও নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে সিদ্দিক এসব অভিযোগকে “রাজনৈতিক নিপীড়ন” ও “প্রহসন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি ব্রিটিশ, বাংলাদেশি নই।” তার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব নথি জাল এবং সিদ্দিকের কখনো বাংলাদেশি পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না।
দুদক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দের অভিযোগে সিদ্দিক, তার মা, খালা ও দুই ভাই-বোনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্লট বরাদ্দের নিয়ম এড়ানো হয়েছে। সিদ্দিক অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, “কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি, এমনকি আমার আইনজীবীদের অনুরোধেও কোনো তথ্য শেয়ার করা হয়নি। এটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নয়।”
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে সিদ্দিকের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়াকে আইন বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। যদিও তারা বলছেন, এটি মূল মামলার বিচারকে প্রভাবিত করবে না। দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, সিদ্দিকের ঠিকানায় সমন পাঠানো হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনও তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন যে শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিরোধীদের দমন করতে এই মামলা করেছে। তিনি তার খালা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে বলেন, বর্তমান তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ এমপির আইনি অবস্থান এবং বাংলাদেশি নাগরিকত্বের দাবি-অস্বীকার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা তৈরি হয়েছে। আদালতে প্রমাণ উপস্থাপনের পরই কেবল এই বিতর্কের নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।