মোঃ নুর আলম পাপ্পু, খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ভবানীগঞ্জের যুবক সজীব মল্লিক (২২) এবং ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আছিয়া খাতুন অনলাইনে প্রেমের সূত্র ধরে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন। পরে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন খোকসার সজীব মল্লিকের নিজ বাড়িতে।
ঘটনাটি মোড় নেয় ২৪ আগস্ট, রোববার। ওইদিন আছিয়া খাতুনের বাবা-মা খোকসার ভবানীগঞ্জে জামাই বাড়িতে কুটুমতালি করতে আসেন। নিয়মমাফিক মিষ্টি নিয়ে এসে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সামাজিকভাবে সমঝোতাও করেন। সজীবের পিতা মিকাইল মল্লিকের বাড়িতেই তারা রাতযাপনও করেন।
কিন্তু পরদিনই চমকপ্রদ মোড় নেয় বিষয়টি। আছিয়া খাতুনের পিতা-মাতা ২৫ আগস্ট মধুখালী থানায় গিয়ে একটি অপহরণ মামলা (নং-১৭) দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে সিভিল পোশাকে মধুখালী থানা পুলিশ এবং আছিয়া খাতুন এর দুলাভাই ও তার পিতা- মাতা সহ খোকসার ভবানীগঞ্জে গিয়ে আছিয়া খাতুনকে জোরপূর্বক ‘উদ্ধার’ করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
এসময় সজীবের মা মহিমা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। অভিযোগ উঠেছে—পুলিশ অপেশাদার আচরণ করেছে এবং এক পর্যায়ে মহিমা খাতুন আহত হন। বর্তমানে তিনি খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয় গ্রামবাসীর চাপ ও উত্তেজনার মুখে পরে খোকসা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে মধুখালী পুলিশ টিম এবং জামাল বিশ্বাস সহ তার পরিবার এর লোকজন উদ্ধার করে খোকসা থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলেছে, ২৪ আগস্ট যখন মেয়ের বাবা নিজেই জামাই বাড়িতে কুটুমতালি করলেন, তখন কোনো অভিযোগ ছিল না। অথচ মাত্র একদিনের ব্যবধানে ২৫ আগস্ট অপহরণ মামলা দায়ের করে আইনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হলো কেন? মিথ্যা মামলার মাধ্যমে আইন ব্যবহারের এ প্রবণতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, আমরা ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা নিয়েছি। তবে খোকসাতে গিয়ে মেয়ে উদ্ধারে অভিযানে কি হয়েছে, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মইনুল ইসলাম বলেন, মধুখালী থানায় দায়েরকৃত একটি অপহরণ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মধুখালী থানা পুলিশের একটি টিম আমাদের খোকসা থানায় আসে। তাদের সঙ্গে আমাদের খোকসা থানার একটি টিম যৌথভাবে সজীব মল্লিকের বাড়িতে যায়। সেখানে আছিয়া খাতুনকে হস্তান্তর না করায় অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তাদের উদ্ধার করে খোকসা থানায় আনা হয়, তবে পুলিশ কোন অপেশাদার মূলক আচরণ করনি। মহিমা খাতুন নামের ভদ্রমহিলা আহত হলেও তার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাকে ঘিরে এখন প্রশ্ন উঠছে—প্রেম ও আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করা মেয়েকে জোর করে ‘উদ্ধার’ করা কতটা যৌক্তিক? একইসঙ্গে আইনের অপব্যবহার, পুলিশের অপেশাদার আচরণ এবং গ্রামীণ সামাজিক সমঝোতার পরে হঠাৎ মামলা দায়ের—সবকিছুই জনমনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।