আব্দুল মাবুদ মোহাম্মদ ইউসুফ, মনোহরদী, নরসিংদী প্রতিনিধি:
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনটি ঢাকা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত। এ আসনটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ও সমৃদ্ধ, যেখানে সব সময়ই বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যায়। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে পাঁচজন প্রার্থী নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, একজন জামায়াতের একক প্রার্থী এবং একজন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী।
বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমেই আলোচনায় আসেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। তিনি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্থানীয় জনগণের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও তার প্রার্থীতা দলের ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করেছে। এতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সমন্বয় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, লে. কর্নেল জয়নাল আবেদীন—তিনি বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেনানী হিসেবে পরিচিত। সাবেক সেনা কর্মকর্তা হওয়ায় তার নেতৃত্বে নতুন ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার প্রত্যাশা রয়েছে। তবে তার সামরিক পটভূমি ভোটারদের একাংশের মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও তৈরি করেছে।
তৃতীয়ত, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় আছেন আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। তিনি জাতীয়তাবাদী দলের সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবং সংগঠনের তরুণ নেতৃত্বের অন্যতম মুখ। তার প্রার্থীতা বিএনপির ভেতরে নতুন নেতৃত্বের উত্থান এবং প্রজন্মের পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে একক প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জামায়াতের নরসিংদী জেলা সহকারী সেক্রেটারি এবং মনোহরদী-বেলাব উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান। মাঠপর্যায়ে তিনি ইসলামী আদর্শ, সেবা ও সংগঠনভিত্তিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তার প্রার্থীতা ইসলামী মূল্যবোধ, আদর্শিক নেতৃত্ব এবং ঐক্যের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তাছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ছাইফুল্লাহ প্রধান। তিনি একজন শিক্ষাবিদ ও মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার প্রার্থীতা ইসলামী শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রচার এবং নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি বহন করছে।
মনোহরদী-বেলাব আসনে নির্বাচন ঘিরে তীব্র উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। অপরদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা তুলনামূলক ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে মাঠে রয়েছেন। ভোটাররা এখন মূলত প্রার্থীদের রাজনৈতিক আদর্শ, সাংগঠনিক কার্যক্রম, ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্বের গুণাবলীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। ফলে এ আসনের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন আরও উত্তপ্ত ও চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠছে