নিজস্ব প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে সাধারণ গ্রাহকরা আজ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বহু ব্যাংকে আমানতকারীরা জমা রাখা টাকা তুলতে পারছেন না। বর্তমানে পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক কেবল নামেমাত্র টিকে আছে, ১২টি ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে এবং আরও ১৫টি ব্যাংক অতিমাত্রায় দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত ব্যাংক খাত নিয়ে এক সেমিনারে এ চিত্র তুলে ধরেন বক্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএপি) এবং জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ ওয়েইডেন যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সেমিনারে বলা হয়, দখল ও লুটপাটের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। খেলাপি ঋণ পাঁচ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে পৌঁছানোর শঙ্কা রয়েছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরও তীব্র করবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম। বক্তব্য রাখেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেনসহ আরও অনেকে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এস আলম ও তার সহযোগীদের কারণে পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংসের মুখে পড়েছে। যদিও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলেও ক্ষমতাসীনরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখেনি, বরং তা ভেস্তে দিয়েছে।
তাদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত হাতে পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সেই সুফল ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। বরং ধারাবাহিক লুটপাট ও অনিয়মের কারণে ব্যাংক খাত ধ্বংসের দিকে গেছে।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, লুটপাটের বেশির ভাগ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে তা পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই। এই কারণে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট দিন দিন আরও বাড়ছে এবং এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।