নিজস্ব প্রতিনিধি:
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে সার, ওষুধ ও চাল পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন কোনো অবস্থাতেই এ পাচার না ঘটে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য ও সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। দুই ফসলি বা তিন ফসলি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি জমি সংরক্ষণে কঠোর বিধান রেখে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গত এক বছরে ৮৮ লাখ ৫৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ ও চারা বিতরণসহ ৮৯৩ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে ধান, আলু, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জিত হয়েছে।
তিনি জানান, সারের বকেয়া ২০ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং রাশিয়া থেকে বিনামূল্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আনার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সার আমদানির সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার ফলে সরকারের ২৩৩ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া ‘সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা’ হালনাগাদ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার, আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২২ টাকা নির্ধারণ এবং কৃষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, চীনে প্রথমবারের মতো আম রপ্তানি, চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার টন আলু রপ্তানি এবং গাবতলীতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের বিষয়েও তথ্য দেন তিনি। এছাড়া ১৫টি ফসলের জন্য জিএপি প্রোটোকল অনুমোদন এবং দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস ধ্বংস করে তার পরিবর্তে দেশীয় ফলজ ও বনজ ৩৩ লাখ চারা বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘কৃষি উন্নয়ন রূপরেখা পরিকল্পনা ২০২৫–২০৫০’ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি মৌজার তথ্য ডাটাবেইসে সংরক্ষিত হয়েছে। কৃষকদের জন্য ‘খামারি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে যেখানে সার, বীজ, আবহাওয়া, রোগবালাই ও ফসল সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে আধুনিকীকরণ, বীজ ব্যবস্থাপনা অনলাইনে আনা এবং আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শেষে তিনি বলেন, গত এক বছরে ১০৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন, ১৯ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ৬৪৫ জন কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন এবং শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।