৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পার্বত্যে অস্থিতিশীলতার নিয়ে ভারতের নতুন ষড়যন্ত্র: সেনাবাহিনীর আড়াইশ নতুন ক্যাম্প দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

পার্বত্য চট্টগ্রামে ফের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের দাবি, ভারতীয় পক্ষের সহায়তাপ্রাপ্ত সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ধর্ষণের নকল নাটক রচনা করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাহাড়ে হামলা চালানো, চাঁদাবাজি ও অপহরণ চালানোসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। পরিণামে পার্বত্যাঞ্চলে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন এবং অন্তত আড়াইশটি নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছে।

সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, শান্তিচুক্তির পরে ক্যাম্প সংখ্যা কমে যাওয়ায় সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো শক্তি সঞ্চয় করেছে। গত এক বছরে পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছে—মোট প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা; যার মধ্যে ইউপিডিএফ সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ১০৪ কোটি টাকা বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। জেলা অনুযায়ী চাঁদার অংক রাঙামাটিতে প্রায় ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়িতে ৮৬ কোটি ও বান্দরবানে ২০ কোটি টাকা হিসেবে আভাস পাওয়া গেছে।

শুধু চাঁদাবাজি নয়, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডেও ইউপিডিএফের সরাসরি হস্তক্ষেপের তথ্য আছে। ২০০৯ সাল হতে এখন পর্যন্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীসমূহের হাতে অপহৃত হয়েছে প্রায় ৩৩২ জন; তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও। একই সময়সীমায় এসব গোষ্ঠীর হাতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৮৯ জন; নিহতদের মধ্যে রয়েছে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও—যাদের সংখ্যা ১৬ জন। সাম্প্রতিক কালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়—এমন ঘটনাও রেকর্ডে আছে।

সেনাবাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ ও সহযোগীরা ভারতের মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় স্থাপিত ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নির্বিচারে অভিযান চালাচ্ছে। সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে না পারায় সন্ত্রাসীরা ফাঁকফোকর কাজে লাগাচ্ছে; তাই প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে স্বল্পসময়ে মোতায়েন হওয়া যায় এমন অতিরিক্ত ক্যাম্প স্থাপন করা অপরিহার্য। বর্তমানে খাগড়াছড়িতে ৯০টি, রাঙামাটিতে ৭০টি ও বান্দরবানে ৫০টি—মোট ২১০টি ক্যাম্প থাকলেও পাহাড়ের বিস্তৃতি ও ভৌগোলিক জটিলতা বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয় বলে তারা জানাচ্ছেন।

অন্যদিকে সেনা সূত্রে দাবি করা হয়, গত সময়ের নীতিমালায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি নরমদিল্লিতা বা আপোষের পরিবেশ থাকায় তারা সহজে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বর্তমান নীতিমালার প্রতিক্রিয়া ‘নো কম্প্রোমাইজ’—অর্থাৎ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপস নয়, প্রয়োজনে সরাসরি অভিযানই সমাধান—এই ব্যাখ্যা দেন কর্তারা। তাঁদের কথায়, অতিরিক্ত ক্যাম্প স্থাপিত হলে তারা এক ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো হটস্পটে অভিযান চালাতে সক্ষম হবে এবং অস্ত্রপ্রবাহ বন্ধ করা, অপহরণ ও চাঁদাবাজি রোধ করা সম্ভব হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ছাড়া সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে। তাদের উদ্বেগ—ইউপিডিএফের কর্মকাণ্ডে যাতে আরো বড় ধরনের সংঘর্ষ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্ভাবনা না তৈরি হয়। তাই আড়াইশ নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের তাগিদ বহুলাংশে তাদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এসেছে।

সেনাবাহিনী বলছে, ক্যাম্প বাড়ানোর বিষয়টি সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। তবে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালনরত ইউনিটগুলো যতটুকু সক্ষমতা আছে তা নিয়েই তারা নজরদারি জোরদার করছে এবং সম্ভাব্য অপপ্রচারের মোকাবিলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top