৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

প্রেম করে বিয়ে অতঃপর এক নির্মম মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

সিহাব আলম সম্রাট, রাজশাহী প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার জামগ্রাম এলাকার মনিয়া আক্তার বর্ষা খাতুন প্রেম করে বিয়ে করেন, একই জেলার পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলার নান্দদি গ্রাম এলাকার মৃত, আয়ুব মন্ডলের ছেলে নাহিদ হোসেনকে। দুই পরিবারের অমতে বিয়ে করার ফলে মানতে পারনি নাহিদের পরিবার। যার ফলে ৩ বছরের সন্তান রেখে ওপারে চলে যেতে হয়েছে বর্ষাকে।

প্রায় ৪ বছর পুর্বে নাহিদ ইসলাম (২৭) ও বর্ষা খাতুন (২২) পরিবারের অমতে দুজনে পালিয়ে বিয়ে করেন। পরে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিয়ের পর থেকেই নাহিদের পরিবার বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো বর্ষা খাতুনকে। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে বর্ষা বহু বার চলে আসেন তার পিতার বাসায়। এমন ঘটনার পর পুলিশ ও  বর্ষার মামা শ্বশুর আজাদ ও আনোয়ারের হস্তক্ষেপে কয়েক বার শশুর বাড়ীতে ফিরে যায় বর্ষা খাতুন। সর্বশেষ এবছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে আবারও বর্ষার উপরে নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন, পরে সইতে না পেরে বর্ষা বিষ পান করে। তবে বর্ষার পরিবারের দাবি তাকে জোর করে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষ পান করা অবস্থায় সেখানে তার বাসায় পড়ে থাকলেও চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টো বর্ষার পিতাকে ফোন করে ডাকা হয়। পরে বর্ষার পিতা এসে মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েকে বাঁচাতে সেখান থেকে মোটরসাইকেল যোগে মেয়ের চিকিৎসার জন্য ঘুরতে থাকেন একেক জায়গায়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি প্রেমের গল্প ও সংসার বিয়ে। এবিষয়ে দুর্গাপুর থানায় ৪ জনকে বিবাদী করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করেন নিহত বর্ষার পিতা মনিরুল ইসলাম। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, স্বামী নাহিদ ইসলাম (২৭), শাশুড়ি রেশমা বেগম (৪২), দেবর মোঃ শান্ত (২৭) ও ছেলের মামা মোঃ আজাদ (৫৫) তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। বিবাদীরা পুলিশের নজরে না পড়লেও, যদিও মামলার আসামীরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বর্ষার নানী মফেজান বেগম বলেন, আমার নাতনি বর্ষাকে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে। বাহিরে অনেক মেয়ের সাথে নাহিদের সম্পর্ক আছে।

মামলার একজন সাক্ষী মো: রনি বলেন, সব সময় বর্ষার উপর অত্যাচার করা হতো। সেদিন বর্ষাকে তারা বিষ খাইয়ে সেখানে রেখেছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালেও নিয়ে যায়নি। পরে বর্ষার পিতা-মাতা এসে বর্ষাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।

বর্ষার ছোট বোন মরিয়ম আক্তার বলেন, আমি যখন সেখানে গিয়ে থাকতাম, তখনও দেখেছি আমার বোনকে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে গালাগালি ও মারধর করতো তারা। এছাড়াও আমার বোনের শরীরে মারধরের দাগ দেখেছি। শুধু সংসার করবে বলে কষ্ট করে সেখানে থেকেছে। আমি এর কঠিন বিচার চাই। ভবিষ্যতে স্ত্রীর সঙ্গে কেউ যেন এই ধরনের আচরণ না করতে পারে।

এসব বিষয়ে বর্ষা খাতুনের মা নাজলী বেগম বলেন, আমার মেয়েকে তারা সব সময় অত্যাচার নির্যাতন করতো। তাদের অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে মাঝেমধ্যে আমার বাসায় চলে আসতো। তারা হত্যা করেছে। আমি এই খুনের কঠিন বিচার চাই। সেখানে গিয়ে দেখে আমার মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে তবুও তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমার মেয়ে মারা যেত না। এটা পরিকল্পিত হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডের আমি বিচার চাই।

বর্ষার পিতা মনিরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে আমার কাছে বর্ষার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন আসে এবং জরুরিভাবে আমাকে ডাকে। বারবার জিজ্ঞেস করেছি কেন আমাকে ডাকছে কিছুই বলেনি তারা। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছে। আমি তখন আমার মেয়েকে মোটরসাইকেলে তুলে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে আসলে সেখানে ডাক্তার ঘোষণা দেয় আমার মেয়ে মারা গেছে। আমার মেয়েকে বিবাদীগণ বিভিন্নভাবে অত্যাচার করত যার ফলে এই মৃত্যু আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।

বিষয়টির আরো জানতে অভিযুক্তদের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের সকলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদেরকে ধরতে চেষ্টাও চলছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top