২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অবস্থান জানার আগে আইএমএফ ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের কথা ছিল চলতি ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে। তবে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আইএমএফের ঋণের শর্তগুলো মেনে চলবে কি না—সে নিশ্চয়তা না পাওয়ায় সংস্থাটি এখনই কিস্তির অর্থ ছাড় করতে আগ্রহী নয়।

ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ডলার সংকট মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করে। পরবর্তীতে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সংস্থাটির কাছ থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই হয়। ফলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫ম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে ৬ষ্ঠ কিস্তি এবং আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

সাধারণত প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ একটি রিভিউ মিশন পাঠায়, যারা সরকারের শর্তপূরণের অগ্রগতি যাচাই করে। এই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফ মিশন বাংলাদেশে আসছে। তারা দুই সপ্তাহ অবস্থান শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ষ্ঠ কিস্তির পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে কেবল রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে অন্যান্য সব শর্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, “আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তি নাও পেতে পারি। নির্বাচনের পর নতুন রাজনৈতিক সরকার আইএমএফের শর্তগুলো মেনে চলবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার পর সংস্থাটি অর্থ ছাড় করবে।”

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আইএমএফ ডিসেম্বরের পরিবর্তে মার্চ বা এপ্রিলে ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র অনুযায়ী, এ কিস্তির পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি ডলার।

তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, কিস্তির অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতায় বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো, রপ্তানি আয় তিন মাসে গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ শতাংশ, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বকেয়া ঋণ নেমে এসেছে এক অঙ্কে। ফলে ডলার সংকট নেই, বরং রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১৪ কোটি ডলারে। দীর্ঘ সময়ের ঘাটতির পর বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবও উদ্বৃত্তে ফিরেছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শেষ দিকে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষে সংস্থাটি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। পরবর্তীতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই ঋণ কর্মসূচি আরও ৮০ কোটি ডলার বাড়িয়ে ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ কিস্তি বাবদ বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৬০ কোটি ডলার।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top