মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের দুই মাস ধরে বেতন বন্ধের প্রতিবাদে সাত ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটকের সামনের বিমানবন্দর সড়ক ও পাঁচমাথা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও বিমানযাত্রীরা।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের শিক্ষকদের দুই মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অথচ আমরা নিয়মিত মাসিক ফি পরিশোধ করছি। অবিলম্বে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ক্লাবের দ্বন্দ্বের সমাধান করতে হবে।” তারা আরও জানান, দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুরের সভাপতি ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন মেনন পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর ৪২ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে পরিবারভিত্তিক কমিটি গঠন করেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।”
তিনি আরও জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ, বন্ধ প্রভিডেন্ট ফান্ড পুনরায় চালু ও সভাপতির অনিয়ম বন্ধসহ ১৬ দফা দাবিতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাফিয়ার রহমানকে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়। কিন্তু উল্টোভাবে দুই সিনিয়র শিক্ষককে কর্মবিরতির নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর শিক্ষকরা ২১ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গণদরখাস্ত দেন, যেখানে সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মাসিক ৭০ হাজার টাকা অনিয়মিত গ্রহণসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়।
পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে তিন ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরে ইউএনও নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর মধ্যস্থতায় ক্লাব সভাপতি শাফিয়ার রহমান ও অধ্যক্ষ মশিউর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ইউএনওকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং শিক্ষক মজিবর রহমান চৌধুরী মুকুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঘোষণা করা হয়।
তবে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেই সিদ্ধান্তের অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে দেন এবং বেতন বিলের স্বাক্ষর না করায় দুই মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবর রহমান চৌধুরী বলেন, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। এমনকি জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিতেও তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ক্লাব সভাপতির স্বাক্ষর না থাকায় বেতন-ভাতা পরিশোধে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।”
এ বিষয়ে লায়ন্স ক্লাব সভাপতি ও যুবদল নেতা জাকির হোসেন মেননের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।