এম. আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে দুই ধাপে সাজিয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পূর্ণাঙ্গ আমলনামা ও মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট নিয়ে লন্ডনে গেছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, বিএনপি এবার দুই ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন দেবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে থাকবেন স্থায়ী মনোনয়নপ্রাপ্তরা, যারা নিশ্চিত ঘোষিত আসন থেকে সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে থাকবেন শর্তাধীন মনোনয়নপ্রাপ্তরা, যাদের প্রার্থীতা চেয়ারপারসনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। প্রয়োজনবোধে এসব আসন জোটের শরীকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
দলীয় কৌশল অনুযায়ী, তরুণ ও উদীয়মান নেতৃত্বকে সামনে আনতে বিএনপি এবার আসন সমঝোতার পাশাপাশি উপমন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত কিংবা বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বের প্রতিশ্রুতিও বিবেচনায় রাখছে। দল সরকার গঠন করতে পারলে এসব তরুণ নেতাদের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্দেশনা অমান্যের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট নেতাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে—এমন সতর্ক বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সব পর্যায়ে।
অন্যদিকে, তারেক রহমান মনোনয়ন বাছাইয়ে সরাসরি তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসনে স্থানীয় জনপ্রিয়তা ও মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তা যাচাই করতে তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামত নিচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন—যেসব নেতা কেবল নিজেদের রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেবল দলীয় আনুগত্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্ক, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, “দল এবার এমন প্রার্থী চায়, যারা শুধু নির্বাচনে জেতার সক্ষমতাই রাখে না, বরং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিএনপির ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।”
এই কৌশল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে একদিকে জোট রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে চায়, অন্যদিকে দলকে নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।