মোঃ বাদশা প্রামানিক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারীর ডিমলায় টানা ৫ দিনের বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়—বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ শান্ত আকাশে মেঘ ডাকতে শুরু করে, এরপর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া। এই বৃষ্টি ও বাতাসে আমন ধানসহ শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রবি শস্যের ক্ষেতও নষ্ট হয়ে গেছে।
বাতাসে নষ্ট হয়েছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। মাঠের পাকা ও আধাপাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। বিশেষ করে পশ্চিম ছাতনাই,পূর্বছাতনা, টেপা খড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি,খালিশা ঝুনাকার চাপানি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বাহিত এলাকায় এছাড়াও নাউতারা ও ডিমলা সদর ইউনিয়নে শত শত একর ধানক্ষেতের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশের গ্রামগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাঠের আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং অনেক ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘরে ফলন তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তারা আরও জানান, আমন ধান কাটার পর জমিতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন। সারা বছর সবজি চাষের জন্য উঁচু জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।
পশ্চিম সাতনায় ইউনিয়নের পেঁয়াজী পাড়া ক্যাম্প এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, “আমি ৫ একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন পর কাটার কথা ছিল। কিন্তু এখন মাঠে পানি জমে ধানের শিষ নষ্ট হচ্ছে, ফলে ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। বালাপারা ইউনিয়নের ঘাটের পাড়ের আব্দুল হাকিম বলেন, হাজার হাজার একর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে এর যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন সরকারের কাছে, শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও ক্ষেতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পানি জমে থাকার কারণে শিকড় পচে গাছ মারা যেতে পারে।”
একই ইউনিয়নের কৃষক এনামুল হক বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রায় শত শত একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছগুলো বাতাস ও বৃষ্টিতে মাটিতে হেলে পড়েছে, অনেক ধান ঝরে গেছে। এখন আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে।”
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২১হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু কিছু নিচু এলাকায় ধান গাছ মাটিতে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। ১৮ হেক্টর জমির ধানের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠিয়েছি।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া হয়েছে। এতে কিছু এলাকায় ধানক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ গোছা বাঁধাসহ অতিরিক্ত পানি জমে না থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন আবহাওয়া অনুকূলে তাই ক্ষয় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।