৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ওষুধ ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

তনিয়া আক্তার,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে চলছে ক্রয়কার্য। অভিযোগ রয়েছে—নিয়ম ভঙ্গ করে প্রতি মাসেই লক্ষাধিক টাকার ওষুধ কেনা হচ্ছে, অথচ পুরো প্রক্রিয়ায় নেই পর্যাপ্ত তদারকি বা আর্থিক জবাবদিহি।

২০২২ সালের ৭ আগস্ট মেডিকেল সেন্টারের জন্য তিন সদস্যের ক্রয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সদস্য হিসেবে আছেন ডা. শরিফ আহমদ আকন্দ এবং ইব্রাহিম খলিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ক্রয় কমিটি পুনর্গঠন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চার বছর ধরে কমিটিটি অপরিবর্তিত রয়েছে, যা প্রক্রিয়াগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

জানা গেছে, এই ক্রয় কমিটি একক ক্ষমতাবলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ওষুধ কিনে থাকে। অর্থাৎ কোনো ধরনের তদারকি ছাড়াই বছরে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়। এসব ক্রয় প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় তারা কম পরিমাণে ওষুধ কিনে বেশি এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ না কিনেও বিল করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয়বিধি অনুযায়ী, যেকোনো পণ্য কেনার আগে একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক, যা পণ্যের মান ও পরিমাণ যাচাই করে ‘ওকে রিপোর্ট’ দেওয়ার পরেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিল গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু মেডিকেল সেন্টারের পরিদর্শন কমিটিকে উপেক্ষা করে ক্রয় কমিটি দীর্ঘদিন ধরে একক সিদ্ধান্তে ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসার পর ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইমদাদুল হুদাকে সভাপতি করে গঠিত ওই কমিটিতে আরও চারজন সদস্য রয়েছেন।

মেডিকেল সেন্টারের দপ্তরপ্রধান ও ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “বিভিন্ন কোম্পানি থেকে যে ওষুধপত্র কেনা হয়, সে বিষয়ে পরিদর্শন কমিটিকে জানানোর কিছু নেই। অগ্রিম অর্থ ছাড়া যদি কোনো সরঞ্জাম কেনা হয়, সেক্ষেত্রে ইন্সপেকশন কমিটির পরিদর্শন প্রয়োজন হয়। তবে আমরা যেসব ওষুধ অগ্রিম অর্থ প্রদান করে ক্রয় করি, সেগুলোর জন্য পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন লাগে না। ক্রয় কমিটি পরিবর্তন না করার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটি পরিবর্তনের দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা যদি এটি পরিবর্তন না করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’

পরিদর্শন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইমদাদুল হুদা বলেন, “ক্রয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয় কমিটি ২৫ হাজার টাকার বেশি মূল্যের কোনো ওষুধ কিনলে পরিদর্শন কমিটিকে জানাতে হয়। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ক্রয় কমিটি ২৫ হাজার টাকার বেশি কেনাকাটা করেনি।”

ক্রয়কার্যে অনিয়মের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top