৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সব ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে: রাজবাড়ীর বহরপুরে বিএনপি প্রার্থী হারুন অর রশিদ

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজবাড়ী জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী ২ আসন (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি)’র ধানের শীষের পদপ্রার্থী মোঃ হারুন অর রশিদ হারুন বলেছেন, বিএনপি’র ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই। যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোন যাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলবো আর হয়ে যাবে। এজন্য জনগনের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগন, জনগন আর জনগন। শুধু তাই নয়, আগামীর রাষ্ট্র নায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পুত্র বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের এই ৩১ দফা বাস্তবয়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব। মানুষের পাশে থেকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

আমি প্রতিবারই বলেছি সামনের পথ মোটেও মসৃন নয়। বিএনপি’র বিরুদ্ধে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সকল ষড়যন্ত্র মোবাবেলা করে আমাদের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে,” জনগনের আস্থা নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না।”
২০২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ শাসনামলের সকল গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় ভাবে কাজ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।

মোঃ হারুন অর রশিদ গত শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বহরপুর ইউনিয়নের পাকালিয়া মন্দিরের সামনে মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানে গিয়ে নেতাকর্মী ও সুধিজনদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।

এসময় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা বিএনপি, যুবদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ স্থানীয় সকল নেতাকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি নিজে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। দেশে তিনিই সর্বোদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার এনে দিয়েছিলেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের মানুষকে সংগঠিত করে কিভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি’কে মানুষ ভোট দিয়ে বার বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপি”র সবচেয়ে বড় অর্জন। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এটি দেশের মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোন দল বর্ডার টপকে ভারতে গিয়ে আমোদ প্রমোদ করে কাটিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতা করেছেন। তিনি বলেন, দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও ঈমানের মধ্যে পড়ে।
হারুন অর রশিদ বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা গুম, খুন, হামলা, শত শত গায়েবি মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপি”র দ্বারাই সম্ভব হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহীদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আবার কেউ কেউ মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাও করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিএনপি”র বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভিতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদেরকে জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদেরকে শুধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কাজেই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেবো। আমি মনেকরি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও অনেক বেশি।

৩১ দফা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতা সহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কিছু মানুষ ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সেটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকার ব্যাংকগুলোকে আইন ও ব্যাংকিং নীতির আলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ করে চলেছেন। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ, জনগণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার কাজ করবে। আমরাও এটা নিয়ে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এর পেছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে ধারনা করা যায়। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। কারণ স্বনির্ভর দেশ গড়তে সুস্থ সবল নাগরিকের গুরুত্ব অনেক বেশি।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছিলেন, ৫% এর বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার কোটাপ্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়েছিল। বিএনপি সেটা করবে না। বিএনপি বারবার বলেছে, কোটা নয় মেধার মুল্যায়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তরা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা বসে নেই। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top