মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর দুটি আসনে বিএনপির দুগ্রুপের দুই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের কোন্দল অনেকটাই নিরসন হয়েছে। এর পাশাপাশি ধানের শীষের বিজয়ে একধাপ এগিয়ে গেছে। দুটি আসনেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজবাড়ী-১ আসন (রাজবাড়ী সদর-গোয়ালন্দ) এ আসন থেকে ১৯৯১ সালে অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), ১৯৯২ সালে উপনির্বাচনে কাজী কেরামত আলী (আওয়ামী লীগ), ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম (বিএনপি), জুন ১৯৯৬ সালে কাজী কেরামত আলী (আওয়ামী লীগ), ২০০১ সালে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম (বিএনপি) ও ২০০৮ সালে কাজী কেরামত আলী (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।
এবার এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ মোল্লা, গণঅধিকার পরিষদের জাহাঙ্গীর খান, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম খান জাহিদ হাসান ও ইসলামী আইন মজলিসের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম কাশেমী। অন্যান্য দলও প্রার্থী ঘোষণায় তোড়জোড় শুরু করেছে। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহর নামও কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে। তবে তাকে এলাকায় কোনো নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ করতে অদ্যাবধি দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা।
নেতাকর্মীদের দাবি, রাজবাড়ী-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম জনপ্রিয়। তারপরও বিএনপির দলীয় কোন্দল নিরসন করতে হবে। ইতোমধ্যে খৈয়ম বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পদ্মা সেতু ও গঙ্গাব্যারেজ
নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। এ নিয়েও সেমিনারের আয়োজন করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচনী কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু করেছেন। জামায়াত প্রার্থীও দীর্ঘদিন ধরে মাঠে
কাজ করছেন। রাজবাড়ী-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, দলের অভ্যন্তরে ও দলের বাইরে সব ভেদাভেদ ও মতবিরোধ নিরসন করে আমরা এক হয়ে সবাই মিলে আগামী নির্বাচনের জন্য কাজ করব। আমি নির্বাচিত হলে এ জনপদের মানুষের জন্য পদ্মা ব্যারেজ, পদ্মা সেতু, বিশ্ববিদ্যালয়, নদীবন্দর, রেলওয়ের ওয়ার্কশপ নির্মাণ, এ ছাড়া হাসপাতাল, অবকাঠামো, স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপশি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, সংস্কৃতি এগুলো নিয়ে কাজ করব।
রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) নিয়েই গঠিত রাজবাড়ী-২ আসন। এ আসন থেকে ১৯৯১ সালে একেএম আসজাদ (জামায়াতে ইসলাম), ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে খোন্দকার ছদরুল আমিন হাবিব (বিএনপি), জুন ১৯৯৬ সালে জিল্লুল হাকিম (আওয়ামী লীগ), ২০০১ সালে নাসিরুল হক সাবু (বিএনপি), ২০০৮ সালে জিল্লুল হাকিম (আওয়ামী লীগ) বিজয়ী হন।
রাজবাড়ী-২ আসন থেকে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুন-অর রশীদ। এখানে জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থীর নামও মোঃ হারুন-অর রশীদ। এ ছাড়া এনসিপি’র সংগঠক সাইয়্যেদ জামিল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মালেক, গণঅধিকার পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী ঘোষণায় তোড়জোড় রয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বক্তব্য – প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি, মারামারি থেকে দলকে রক্ষা করতে হলে হারুনকে প্রয়োজন। তা না হলে চরম
নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে। এ আসনে বরাবরই প্রভাব বিস্তার করেছে বিএনপির প্রার্থী। গত সরকারের আমলে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম। তাদের দেওয়া বিপুল অর্থ ও অস্ত্র আছে পলাতক সন্ত্রাসীদের কাছে। বিএনপির শক্ত প্রার্থী হারুন-অর রশীদ থাকায় ভোটে নৈরাজ্য, ভয়ভীতি- এমনকি ভোটার আসতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারবে না।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-২ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী হারুন-অর রশীদ বলেন, সততার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, ভোটের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অবস্থান সৃষ্টি করা, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থাকা, দলীয় কোন্দল নিরসনে প্রতিটি নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়ায় কারো মনে কষ্ট নেই। এ কারণে সবাই আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে ইনশাআল্লাহ।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার দুটি আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ৪ হাজার ৯৯। রাজবাড়ী-১ আসনের দুই উপজেলায় রয়েছে ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৪৩, নারী ২ লাখ ২২ হাজার ৮৩৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ১০ জন।
রাজবাড়ী-২ আসন তিনটি উপজেলা, ২৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনের মধ্যে পাংশা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৬৬৩, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৭০ এবং কালুখালী উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৪। এ আসনে মোট পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৯, নারী ভোটার ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৫৩ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৫ জন