২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন: শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বসুন্ধরায় সংবর্ধনাস্থলে লাখো মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল প্রতীক্ষিত দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক ও আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেছে।

দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন, আর এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ ও জনসমুদ্রের ঢল। বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিশেষ ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সেখানে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের আবেগাপ্লুত প্রতিক্রিয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

তার সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং পরিবারের আদরের পোষা বিড়াল ‘জেবু’, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিশেষ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বিমানবন্দরে অবতরণের পর নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দুপুরের পরপরই তিনি শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বাসযানে করে যাত্রা শুরু করেন বসুন্ধরার ৩০০ ফিট সড়কে অবস্থিত জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন বিশাল সংবর্ধনাস্থলের উদ্দেশে।

পথে পথে রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, অনেকেই হাতে ফুল, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে জয়ধ্বনি করেন, কেউ কেউ মোবাইলে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

বিকেল ৪টার দিকে তারেক রহমান সংবর্ধনাস্থলে পৌঁছালে উপস্থিত নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ নাগরিকদের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। সংবর্ধনা মঞ্চের আশপাশে, রাস্তার ধারে, ছাদে, এমনকি উঁচু স্থাপনাতেও ছিল মানুষের ভিড়, যারা দূর থেকে হলেও প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দলীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল এবং আগত জনস্রোত আয়োজনের পরিধিকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থক রাজধানীতে সমবেত হয়েছেন।

বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে মানুষ রাতভর যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছেছে—কেউ হাতে দলীয় পতাকা, কেউ ব্যানার, আবার কেউ প্রিয় নেতার ছবিসংবলিত পোস্টার বহন করেছেন। তাদের অনেকে জানান, এই মুহূর্তটি জীবনে একবার আসে এবং সেই ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে তারা নানা বাধা-দূরত্ব অতিক্রম করে এসেছেন। নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বিমানবন্দর সড়ক, ভিআইপি গেট, আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথে বসানো হয় বিশেষ চেকপোস্ট, বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি এবং মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

একইভাবে সংবর্ধনাস্থল ঘিরেও ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয়, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এত বড় গণসমাগমের কারণে নিরাপত্তা পরিকল্পনা একাধিকবার হালনাগাদ করতে হয়েছে এবং প্রতিটি স্তরে সমন্বিত কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনাই নয়, বরং এটি দলের জন্য নতুন উদ্যম, নতুন রাজনীতির দিকনির্দেশনা এবং ভবিষ্যতের পথচলার সূচক।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর সরাসরি জনগণের সামনে দাঁড়ানো তারেক রহমানের জন্য যেমন আবেগঘন মুহূর্ত, তেমনি নেতাকর্মীদের জন্যও এটি অনুপ্রেরণা ও সাহস জোগানো একটি অধ্যায়। নানা বয়সী মানুষ—বিশেষ করে তরুণ ও নতুন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য, যারা পরিবর্তন ও নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

সংবর্ধনাস্থলে পৌঁছার মুহূর্তে শ্লোগান, উল্লাস, করতালি আর আবেগঘন চিৎকারে পুরো পরিবেশ এক অনন্য আবেশ সৃষ্টি করে। দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সংবর্ধনা মঞ্চে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা হয় ‘স্বাগতম তারেক রহমান’, ‘গণতন্ত্রের নেতার প্রত্যাবর্তন’ ইত্যাদি স্লোগান।

অনেকে জানান, বহু বছর পর এমন স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক গণসমাগম তারা প্রত্যক্ষ করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণ, দলীয় কৌশল, নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং গণআন্দোলনের ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বিশেষ করে দলীয় নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি এবং মাঠের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি, রাজনৈতিক পুনর্গঠন এবং জনভিত্তি সুসংহত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

একইসঙ্গে এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছে, তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেতার প্রতি আবেগী সংযোগ এবং গণসমর্থনের একটি বড় সূচক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

তবে এত বড় জনসমাগমের কারণে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়, কয়েকটি সড়কে সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছে। এর পরও উপস্থিত মানুষের উচ্ছ্বাস ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কোনো ধরনের অস্বস্তি বা বিশৃঙ্খলা বড় আকার ধারণ করেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘স্বাগতম র‍্যালি’, ক্ষুদ্র সমাবেশ, ব্যানার–পতাকা–বলুন উড়ানোসহ নানা আয়োজনে উদ্‌যাপন চলে, যা দিনটিকে উৎসবের আবহে পরিণত করে। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একটি আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তন নয়—এটি ছিল জনসমর্থনের এক বিশাল বহিঃপ্রকাশ, রাজনৈতিক আবেগের বিস্ফোরণ এবং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনার অনুভূতি।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বসুন্ধরার ৩০০ ফিট সড়কের সংবর্ধনাস্থল পর্যন্ত পুরো পথ জুড়ে যে জনস্রোত, যে উচ্ছ্বাস এবং যে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top