১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, প্রাণ গেল আরও শতাধিক ফিলিস্তিনির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষকবলিত গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার এই প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪টি ভোট পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের একক বিরোধিতায় তা বাতিল হয়ে যায়।

এ ভেটোর ফলে গাজায় যুদ্ধবিরতির আশায় আবারও বাধা তৈরি হলো, পাশাপাশি মানবিক সহায়তার পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। একই দিনে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯৭ জন, আহত হয়েছেন আরও ৪৪০ জন ফিলিস্তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের একক অবস্থান

প্রস্তাবের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, এতে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই। নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভাষ্য, “ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের নীতিগত অবস্থান। হামাসকে পরাস্ত করাই ইসরাইলের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

চীনের প্রতিক্রিয়া ও বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা

চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, “ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমা লঙ্ঘন করেছে, অথচ একটি দেশের একক সুরক্ষায় কেউ দায় নিচ্ছে না।” আল জাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা মন্তব্য করেন, “এই ভেটো যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বমঞ্চে পুরোপুরি একঘরে করে ফেলেছে।”

সহায়তা কেন্দ্রগুলো রূপ নিচ্ছে মৃত্যুফাঁদে

ইসরাইলি বাহিনী সম্প্রতি গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এসব কেন্দ্রে সহায়তা নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রীম আল-আখরাস নামের এক মায়ের মৃত্যুর পর তার সন্তান কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আম্মু শুধু খাবার আনতে গিয়েছিলেন।”

জাতিসংঘের হতাশা

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা ও সক্ষমতা আছে। শুধু সাহায্যের জন্য পথ খুলে দিন।” তিনি গাজার সব সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির দাবি, হামাসের বিরুদ্ধে সহায়তা চুরির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন

ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা থেকে জানান, “আমি হাড় জিরজিরে কিশোরদের কাঁদতে দেখেছি। তারা খাবারের জন্য হাত বাড়িয়ে আকুতি করছে।”

মৃত্যু ও ধ্বংসের হিসাব

ইসরাইলের ভাষ্যমতে, হামাসের হাতে এখনো ৫৮ জন বন্দি রয়েছে। হামাসকে নির্মূলের নামে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৪,৬০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। আরও হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন।

গাজা পরিস্থিতি এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ইসরাইলি হামলা চলছে অব্যাহতভাবে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের অধিকাংশ দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের একক অবস্থান গাজার জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top