আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। লন্ডনে একাধিক কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বশক্তির এখনই এগিয়ে আসা জরুরি।
ভারতের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ জবাব
বিলাওয়াল দাবি করেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান কৌশলগতভাবে ভারতকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং চাইলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারত। তবে পাকিস্তান দায়িত্বশীল আচরণ করেছে এবং শান্তির স্বার্থে সংযম দেখিয়েছে।
লন্ডনে প্রবাসী সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি বলেন, “আমরা ২০টি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে টার্গেট করেছিলাম, কিন্তু গুলি করে ভূপাতিত করেছি মাত্র ছয়টি। এর মাধ্যমে পাকিস্তান প্রমাণ করেছে, আমরা প্রতিরোধের পাশাপাশি শান্তির পক্ষেও অঙ্গীকারবদ্ধ।”
কাশ্মীর ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা আহ্বান
কাশ্মীরসহ সব বিরোধ নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে বিলাওয়াল বলেন, “সমস্যাগুলো আটকে আছে, কারণ ভারত আলোচনায় আসতে চায় না। শান্তিপূর্ণ আলোচনার শুরু কাশ্মীর থেকেই হওয়া উচিত।”
তিনি জানান, পাকিস্তান সংঘর্ষের সময়ে একটি নিরপেক্ষ আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই শর্তেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রশংসা
বিলাওয়াল জানান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।
পানি বন্ধের হুমকি নিয়ে হুঁশিয়ারি
লন্ডনের চ্যাথাম হাউস ও আইআইএসএস-এ দেওয়া বক্তৃতায় তিনি ভারতের একতরফা পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। বিশেষ করে ইন্দাস নদী চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে, আমরা তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলেই বিবেচনা করব।”
তথ্য বিকৃতির অভিযোগ
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপানোর বিষয়ে ভারতীয় অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে বিলাওয়াল বলেন, “ভারত বারবার তথ্য বিকৃত করে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। আমরা বরং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি।”
বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচার
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সফরে বিলাওয়াল ও তার দল যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টিরও বেশি বৈঠক করেছেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরদের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল—বিশ্বকে জানানো যে, পাকিস্তান যুদ্ধ চায় না, চায় ন্যায্য, সম্মানজনক ও টেকসই শান্তি।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন হিনা রব্বানি খার, শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, জলিল আব্বাস জিলানি, তেহমিনা জানজুয়া প্রমুখ।
বিলাওয়ালের ভাষায়, “আমাদের শান্তি প্রচেষ্টা কাশ্মীর সমস্যার ন্যায্য সমাধানের মাধ্যমেই শুরু হওয়া উচিত।”