নিজস্ব প্রতিনিধি:
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ গাজায় ইসরাইলি হামলাকে “আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যা” আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি জানান, গাজায় ইসরাইল হিরোশিমার চেয়ে ছয় গুণ বেশি শক্তিশালী ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে।
আলবানিজ বলেন, “অস্ত্র কোম্পানিগুলো ইসরাইলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে রেকর্ড মুনাফা করছে, আর গাজার নিরীহ বেসামরিক জনগণ এর মূল্য দিচ্ছে।” তিনি গাজায় মার্কিন-ইসরাইলি পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমকে “একটি মৃত্যুফাঁদ” বলে নিন্দা করেন, যা ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষদের হত্যা বা বাস্তুচ্যুত করার জন্য তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ১৩০ জন এবং আহত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন। ত্রাণকেন্দ্রে হামলায় ইতিমধ্যে ৬৫২ ত্রাণপ্রার্থী নিহত হয়েছেন।
আলবানিজ তার প্রতিবেদনে ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, তারা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে “দখলদারিত্বের অর্থনীতি” চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “ইসরাইলি স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৩% মুনাফা অর্জিত হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বৈপরীত্য তুলে ধরে – একজন সমৃদ্ধ হচ্ছে, আর একজন মুছে যাচ্ছে।”
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি তিনি ইসরাইলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। আলবানিজ বলেন, “গণহত্যা এতটাই দৃশ্যমান যে অজ্ঞতা বা আদর্শগত কারণ এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি নাগরিক সমাজ, ট্রেড ইউনিয়ন ও সাধারণ মানুষের প্রতি বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং জবাবদিহিতার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এরপর কী হবে, তা আমাদের সবার ওপর নির্ভর করে।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলবানিজের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরাইল বিরোধী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।