নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ছিলেন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র গ্রুপের নিয়ন্ত্রক। শেখ রেহানার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রেলওয়ের ঠিকাদারি কাজ এককভাবে পরিচালনা করতেন। ক্ষমতার জোরে বাবর মাফিয়াসুলভ আচরণ করতেন, একাধিক বিলাসী গাড়িতে চড়ে সশস্ত্র প্রহরাসহ চলাফেরা করতেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান, যাতে পথচারী ও শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন নিহত হন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাবর বাড়ি-গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান। তার পরিত্যক্ত গাড়িগুলোর মধ্যে একটি আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৩৯-৬৯) গাড়ি এখন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বাহারের দখলে। তিনি গাড়িটি নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাহার দাবি করেন, গাড়িটি তিনি শাহ আলম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন। শাহ আলম রেলওয়ের শীর্ষ ঠিকাদার এবং বাবরের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন।
বিআরটিএর রেকর্ড অনুযায়ী, গাড়িটি শাহ আলমের নামে নিবন্ধিত। ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট তিনি গাড়িটি বাবরকে উপহার দেন। সরকার পতনের পর বাবর গাড়িটি শাহ আলমের কাছে রেখে পালিয়ে যান। পরে শাহ আলম বিএনপি নেতা বাহারকে গাড়িটি হস্তান্তর করেন। তবে বিআরটিএ নীতিমালা অনুসারে, গাড়ি বিক্রির ৩০ দিনের মধ্যে নতুন মালিকানার নিবন্ধন আবশ্যক, যা এখনো হয়নি।
বাবর ছিলেন শেখ রেহানার নির্ধারিত রেলওয়ে কমিশন এজেন্ট, যিনি ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, সহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে রেলওয়ে টেন্ডার সংঘর্ষে দুজন নিহত হন, যার মামলায় বাবর প্রধান আসামি ছিলেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালে এক রাজনৈতিক কর্মীকে গুলি করে হত্যার দায়েও তার নাম জড়িত, তবে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে তার বাহিনীর হামলায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হন।
বর্তমানে বাবরের গাড়িটি বিএনপি নেতার ব্যবহারে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও বাহার দাবি করেন, তিনি বৈধভাবে গাড়িটি কিনেছেন, তবে প্রমাণপত্রে ক্রয়তারিখ উল্লেখ নেই। শাহ আলম এক বছর আগে গাড়িটি বিক্রি করার কথা বললেও বাবরের ব্যবহার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতার সঙ্গে যুবলীগ সন্ত্রাসীর সম্পদ হস্তান্তরের রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।