আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির প্রশাসনের চাপে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাজা অবরোধ নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী তাদের বিবৃতি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের দুটি সূত্রে জানা গেছে, বিবৃতি প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আল-আজহারের মূল বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংসতা’ আখ্যা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের অনাহার ও মানবিক সংকটের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করা হয়েছিল। কিন্তু পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে জানায়, ‘যুদ্ধবিরতি আলোচনা যাতে ব্যাহত না হয়’ সেটাই তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ।
ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলার্স ইউনিয়নের মহাসচিব আলী আল-কারদাগি এই সিদ্ধান্তকে ‘নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, “মানবিক সংকটের এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার চেষ্টা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।” নেদারল্যান্ডসে মিশরীয় দূতাবাসের সামনে এক মানবাধিকার কর্মী শিকল দিয়ে নিজেকে বেঁধে প্রতিবাদ জানান এবং সিসি সরকারকে ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যা দেন।
গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের ফলে গাজায় অপুষ্টি ও অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ জনই শিশু। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিশর সরকারের এই হস্তক্ষেপ ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টার অংশ, যা ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ধর্মীয় নেতৃত্বের স্বাধীন মত প্রকাশে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করেছে। আল-আজহারের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের কণ্ঠ রোধ করার এই চেষ্টা মুসলিম বিশ্বে মিশরের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।