নিজস্ব প্রতিনিধি:
গত এক দশকে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি ও স্পাইওয়্যার আমদানি করেছে, যা প্রায়শই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে গোপনে আনা হয়েছে। টেকনোগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসল সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং পদ্ধতি থেকে আধুনিক সাইবারভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলা এবং ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারি হামলার পর সন্ত্রাস দমনের নামে এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার বাড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব প্রযুক্তি মূলত রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচন ও গণবিক্ষোভের সময়।
আমদানিকৃত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর এবং সেলেব্রাইট, ফিনফিশার ও প্রিডেটরের মতো স্পাইওয়্যার, যা ওয়ারেন্টবিহীন নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ব্যয়ের মধ্যে অন্তত ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ইসরাইলি উৎস থেকে আসা প্রযুক্তির জন্য, যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এসব প্রযুক্তি সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) নজরদারি প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ক্রেতা, যারা মোট ব্যয়ের ৫৮ শতাংশ (প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে। তারা ডিপ প্যাকেট ইনস্পেকশন (ডিপিআই) এবং কনটেন্ট ফিল্টারিং স্পাইওয়্যার কিনেছে। এছাড়া র্যাব, পুলিশ, ডিজিএফআই এবং বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি-র মতো সংস্থাগুলোও বিভিন্ন নজরদারি সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুরোনো টেলিযোগাযোগ আইনগুলোকে নজরদারির বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে সংসদীয় তদারকি বা জবাবদিহিতার কোনো ব্যবস্থা নেই। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তির ক্রয় বেড়ে যায়, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে র্যাবকে মোবাইল ইন্টারসেপশন ডিভাইস কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার রয়েছে।
এই নজরদারি প্রযুক্তিগুলো বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এসব প্রযুক্তি জননিরাপত্তার নামে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।